একসময় মাঠ কাঁপানো প্রিমিয়ার লিগের তারকারা আজ আর্থিক বিপর্যয়ের শিকার। তাদের অনেকেই দেউলিয়া হয়েছেন, বাড়িঘর হারিয়েছেন এবং নতুন করে জীবন শুরু করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তাদের দাবি, ভুল জায়গায় বিনোয়োগের কারণেই এমন করুণ পরিণতি হয়েছে। এই ফুটবলাররা এখন একত্রিত হয়েছেন একটি গ্রুপে, যার নাম ভি১১ (V11)। তাদের উদ্দেশ্য, আইন পরিবর্তন করে প্রতারণার শিকারদের রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতে অন্য খেলোয়াড়দের সতর্ক করা।
ড্যানি মারফি, যিনি একসময় লিভারপুল ও টটেনহ্যামের মতো ক্লাবে খেলেছেন এবং এখন জনপ্রিয় ফুটবল বিশ্লেষক, তিনি একাই হারিয়েছেন প্রায় ৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
তিনি জানান, ৯০ এবং শূন্য দশকে কিংসব্রিজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভুল পরামর্শের শিকার হয়েছেন তিনি। মারফি ছাড়াও এই গ্রুপের সদস্য হিসেবে আছেন মাইকেল থমাস, রড ওয়ালেস, ব্রায়ান ডিন এবং শোন ডেভিস-এর মতো সাবেক ফুটবলাররা।
ফুটবল থেকে ট্যাক্সি ড্রাইভার ও পেইন্টার
একসময়কার প্রিমিয়ার লিগ তারকাদের অনেকেই এখন ভিন্ন পেশায়। সাবেক ফুটবলার শোন ডেভিস বর্তমানে একজন পেইন্টার ও ডেকোরেটর হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি জানান, তার কাছে এইচএমআরসিয়ের ৩ লক্ষ ৩০ হাজার পাউন্ডের ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। এই আর্থিক চাপ তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। ডেভিস বলেন, আমার মনে হয় জীবন শেষ হয়ে গেছে।
আরেক সাবেক খেলোয়াড় রড ওয়ালেস, যিনি প্রায় ২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগে ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়া হয়েছেন।
এই ফুটবলাররা যখন ক্যারিয়ারের শীর্ষে ছিলেন, তখন ফুটবল জগতে প্রচুর অর্থ আসা শুরু করে। ব্রায়ান ডিন, যিনি ১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম গোল করেন, তিনি বলেন, ‘তখন আমরা অনুভব করেছিলাম যে আমাদের আর্থিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখা দরকার।’
কিংসব্রিজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ঠিক সেই সময়েই তাদের কাছে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ হিসেবে এসেছিল। তাদের ওয়েবসাইটে ৩৬০-এরও বেশি ফুটবলারকে ক্লায়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা ছিল।
কেন হলো এমন বিপর্যয়?
কিংসব্রিজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পরামর্শে খেলোয়াড়দের প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, যেমন ফিল্ম ফাইন্যান্সিং এবং সম্পত্তিতে অর্থ ঢালতে বলা হতো। এর ফলে অনেকেই তাদের জীবনের প্রথম উপার্জন এবং সঞ্চয় এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন, যার বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়।
এই বিনিয়োগের ফলে তারা শুধু টাকা হারাননি, এইচএমআরসি তাদের ওপর মোটা অঙ্কের ট্যাক্সও দাবি করে, কারণ এসব বিনিয়োগের সুযোগগুলো ছিল ট্যাক্স-সংক্রান্ত।
যদিও সিটি অব লন্ডন পুলিশ এই ফুটবলারদের ‘অপরাধের শিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এইচএমআরসি তাদের বিরুদ্ধে ট্যাক্স দাবি ছাড়ছে না।
এ কারণে ভি১১ গ্রুপ এখন আইন পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছে, যাতে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষদের ওপর অযাচিত ট্যাক্স চাপানো না হয়।
এ বিষয়ে ড্যানি মারফি বলেন, ‘এই গ্রুপটি আমার জীবন বাঁচিয়েছে। এটি আমাদের একতার শক্তি।’