২২ বছর পর ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সেই জয়ের রাত যেন নতুন আলো দেখাল বাংলাদেশ ফুটবলকে। মাঠে লড়াই, ড্রেসিংরুমে আবেগ, সব মিলিয়ে এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ইংল্যান্ডপ্রবাসী তারকা হামজা চৌধুরীর জন্যও ক্যারিয়ারের বিশেষ এক মাইলফলক। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে স্বস্তি, আবেগ আর অকপট উত্তেজনা।
সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে পয়েন্ট হারাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল বাংলাদেশ। আজ সেই দুঃসহ বৃত্ত ভেঙে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে কাবরেরার দল। রক্ষণে অসাধারণ ভূমিকা রাখা হামজা বলেন, শেষ দিকে আর ম্যাচ হারাইনি, পয়েন্টও ফেলিনি। সবাই বিশ্বাস রেখেছিলাম, মিলে মিশে সামলাতে পারব। খেলোয়াড়দের জন্য, স্টাফদের জন্য দারুণ খুশি। এত পরিশ্রমের পর এটাই প্রাপ্য ছিল।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে হামজা বিশেষভাবে তুলে ধরেন দলের প্রস্তুতি পর্বের কথা। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা প্রায় ২৩ দিন ধরে দীর্ঘ ক্যাম্পে দলকে প্রস্তুত করে তুলেছেন। শেষ মুহূর্তে এসে দলে যোগ দিলেও সবার ত্যাগে মুগ্ধ হামজা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, জয়টা এসেছে। আমি তো একদম শেষে ক্যাম্পে এসেছি। কিন্তু অন্যরা দেশের জন্য, পরিবারের জন্য ২৩ দিন ধরে কঠিন পরিশ্রম করেছে। আজ সেই ত্যাগেরই পুরস্কার।
দলে দেরিতে যোগ দিলেও মানসিকভাবে দলকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে হামজা বলেন, শেষ চার ম্যাচে আমরা পজেশন ভালো রেখেছি, ট্যাকটিক্যালিও ভালো ছিলাম, কিন্তু শেষ ধাপে আটকে গেছি। আজ হয়তো পায়ে বল কম ছিল, কিন্তু দেখিয়েছি আমরা কতটা স্থির থাকতে পারি। এখন দুই দিকই একত্র করে সামনে এগোতে হবে।
ইংলিশ ফুটবলে লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জেতা হামজার ক্যারিয়ারের বড় সাফল্য। তবে ভারতের বিপক্ষে এই জয় কি সেই অর্জনকে ছাড়িয়ে গেল? প্রশ্ন শুনে তিনি বিন্দুমাত্র দেরি না করে বললেন, ভিন্ন কারণে, হ্যাঁ। আজ আমরা ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন কিছু সম্ভব নয়। তাই এটিও আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অর্জন।
জয়ের আনন্দের মধ্যেও মূল পর্বে জায়গা না পাওয়ার আক্ষেপ চাপা থাকেনি তার কথায়। আগের ম্যাচগুলোতেও সুযোগ ছিল বাংলাদেশের, কিন্তু মাঠের ফল এনে দিতে পারেনি দল।
হামজা বলেন, হ্যাঁ, কষ্ট লাগে। কিন্তু এটিও ছিল এক ধরনের ফাইনাল। ২২ বছর মানুষ অপেক্ষায় ছিল বড় একটা জয় দেখার। আজ সেটা হলো। পারফরম্যান্স তো হচ্ছিলই, দরকার ছিল শুধু ফল। মার্চে আবার তৈরি হব। পারফরম্যান্স আর ফল, দুটো মিলিয়ে আরও শক্ত হয়ে ফিরব।

