ঢাকা বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

ক্ষুধার্ত শৈশব পেরিয়ে যেভাবে বিশ্বজয়

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
রোনালদো নাজারিও। ছবি- সংগৃহীত

ফুটবল ইতিহাসে এমন খেলোয়াড় খুব কমই আছেন, যাদের ক্যারিয়ার একদিকে রূপকথার মতো উত্থান, অন্যদিকে নির্মম ইনজুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধের গল্প। রোনালদো নাজারিও দে লিমা—যিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত 'দ্য ফেনোমেনন' নামে—তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন ফুটবলপ্রেমীদের শিহরণ জাগায়।

রিও ডি জেনেইরোর দারিদ্র্যপীড়িত বেড়ে ওঠা রোনালদোর শৈশব ছিল সংগ্রামে ভরা। পরিবারের খরচ চালাতে শিশুকালেই তাকে বাজারে খেলনা ও বিভিন্ন ছোটখাটো জিনিস বিক্রি করতে হতো। ফুটবলের প্রতি তার অদ্ভুত টান থাকলেও সুযোগের অভাব ছিল চরম। এ

কবার ফ্লামেঙ্গোর ট্রায়ালে যাওয়ার বাসভাড়া পর্যন্ত ছিল না তার কাছে—যা পরবর্তীতে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে একটা কিংবদন্তি গল্পে পরিণত হয়েছে।

১১ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব সাও ক্রিস্টোভাও তার প্রতিভা চিনতে পারে। সেখান থেকেই রোনালদোর ফেটে পড়া প্রতিভার শুরু—যার ঝলক দেখা যায় ব্রাজিলের বড় ক্লাবগুলোতে খুব দ্রুতই।

রোনালদো বয়স যখন ১৬, তখন ক্রুজেইরোতে তার গোলবন্যা ইউরোপের ক্লাবগুলোর দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে পিএসভি আইন্দহোভেন তাকে নিয়ে যায় ইউরোপে—যেখানে তিনি হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য গোলমেশিন।

১৯৯৬-এ বার্সেলোনা তাকে দলে ভেড়ায়। মাত্র এক মৌসুমেই ৪৭ ম্যাচে ৩৪ গোল করে তিনি প্রমাণ করেন কেন তাকে ‘ফেনোমেনন’ বলা হয়। ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে যাওয়ার গতি, ড্রিবলিং, শক্তি ও নিখুঁত ফিনিশিং—রোনালদো যেন ফুটবল মাঠে ছিল একক শিল্পী।

ইন্টার মিলানে যোগ দেওয়ার পরই শুরু হয় কঠিন সময়। হাঁটুর মারাত্মক ইনজুরি তাঁকে একাধিকবার মাঠের বাইরে ফেলে দেয়। বহু খেলোয়াড় এমন ইনজুরিতে ক্যারিয়ারই হারিয়ে ফেলতেন—কিন্তু রোনালদো ফিরেছিলেন আরও শক্তিশালী রূপে।

২০০২ বিশ্বকাপে তার প্রত্যাবর্তন ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা কামব্যাকগুলোর একটি। সেই বিশ্বকাপে ৮ গোল করে তিনি ব্রাজিলকে এনে দেন পঞ্চম বিশ্বকাপ।

যেসব রেকর্ড রোনালদোকে কিংবদন্তি বানিয়েছে

দুইবার বিশ্বকাপ জয়: ১৯৯৪ (যদিও মাঠে নামেননি), ২০০২—যেখানে তিনি ছিলেন দলের সবচেয়ে বড় নায়ক।

ব্যালন ডি’অর: দু’বার (১৯৯৭, ২০০২)—এখনও তিনি সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ীদের একজন।

ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার: তিনবার—যা তার সময়ে সর্বাধিক।

বিশ্বকাপ গোল: ১৫টি—২০১৪ সাল পর্যন্ত এই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ ছিল।

ইউরোপ, ব্রাজিল, বিশ্ব—যেখানেই খেলেছেন, তিনি ছিলেন গোলমেশিন; অদম্য, ভয়হীন, অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান।

রোনালদো শুধু গোল করেছেন তা নয়—তার খেলা ফুটবলকে দিয়েছে এক নতুন সৌন্দর্য।