গাজার বেদনায় ডুবে থাকা এক সময়ে, ফিলিস্তিন জাতীয় ফুটবল দলের আরব কাপের ধারাবাহিক জয় যেন একটি বিরল এবং অমূল্য একতার বার্তা নিয়ে এসেছে। কাতারে চলমান এই টুর্নামেন্টে দলের সাফল্য শুধু ক্রীড়া জয়ের কথা বলছে না, বরং একটি জাতির আশা, গর্ব এবং সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজার বৃষ্টি ভেজা তাবু থেকে শুরু করে লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার শরণার্থী শিবির পর্যন্ত, এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফিলিস্তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে এই আনন্দের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে।
রাফাহ থেকে আসা কোচ ইহাব আবু জাজারের পরিবারের বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, তার মা এখন মাওয়াসি এলাকায় তাবুতে বসবাস করছেন। এই প্রেক্ষাপটেও তিনি দলের নেতৃত্বে নতুন আশা জাগিয়েছেন।
কেবল এক মুহূর্তের জন্যই সঠিক, তার দল মাঠে জয় এনে দিয়েছে এবং প্রথমে গাজার মানুষদের, পরে সব ফিলিস্তিনির উদ্দেশ্যে এই জয় উৎসর্গ করেছে।
ফিদাঈদের সাফল্যের গভীর অর্থ
দলের ডাকনাম ‘ফিদাঈ’, অর্থাৎ ‘যোদ্ধা’। এর আড়ালে এক প্রগাঢ় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বার্তা লুকানো রয়েছে। এটি শুধু ক্রীড়া নয়, এটি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিভক্তির অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের অখণ্ড পরিচয় ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও দেখায়, বিভিন্ন বয়সের মানুষ—নারী, গৃহিণী, বৃদ্ধ—উচ্ছ্বাসের সাথে ম্যাচ উপভোগ করছেন।
ফিলিস্তিনের জন্য ফুটবল কেবল একটি খেলা নয়, এটি প্রতিরোধের প্রতীক। প্রতিটি গোল যেন বলে ‘আমরা এখনও এখানে আছি।’ ইসরায়েলের সহিংসতার বিরুদ্ধে এই জয় একটি সাহসী প্রতিবাদ।
এছাড়াও, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন-এর পতাকা এবং নাম রাজনৈতিক প্রভাব বা বিভাজন ছাড়াই উঁচু করে দেখানো হচ্ছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মাঝেও এক ঐক্যের প্রতীক।
দলটি শুধু ফিলিস্তিনের মানুষের মধ্যে নয়, আরব বিশ্বে একতার বার্তা পাঠাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জয় ও সমর্থনের মাধ্যমে টিউনিশিয়ার খেলোয়াড়কে কোচকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায়। আরব দর্শকরা নিজেদের পতাকার পাশে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করছেন।
এদিকে, দলের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ কম, অর্থনীতি ও অবকাঠামো সীমিত। স্থানীয় লীগ বছরের পর বছর বন্ধ, এবং ইসরায়েলের হামলায় স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া সুবিধা ধ্বংস হয়েছে। এ সকলের পরও দল মাঠে অসাধারণ খেলা উপস্থাপন করেছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন