ঢাকা শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

নিম্নচাপের ফলে ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম
নিম্নচাপের প্রভাবে ৪ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে উপকূলীয় এলাকা। ছবি- সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ দেশের উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতসহ ঝোড়ো হাওয়া বইছে। নিম্নচাপে উপকূল অতিক্রম করার সময় দেশের ১৪ জেলায় ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার (২৯মে) টার দিকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
 
নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরের ওপর দিয়ে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
 
এ অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সুন্দরবন ও মোংলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে, যার ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় আড়াই থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

বৃহস্পতিবার জোয়ারের সময় সুন্দরবনের দুবলার চরে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। করমজল এলাকায় পানি বেড়েছে প্রায় আড়াই ফুট। এতে করে সুন্দরবনের অনেক অংশ পানিতে তলিয়ে গেলেও বনের এবং বন্যপ্রাণীর তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারণ ভাটার সময় পানি আবার নেমে যাবে।

সুন্দরবন দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান জানান, বুধবার (২৮ মে) থেকেই সাগর প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে ওঠে, সঙ্গে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত। বৃহস্পতিবারের জোয়ারে দুবলার চরে তিন ফুট পানি বেড়ে যায়। তবে সুন্দরবনের জেলেরা সবাই নিরাপদে আছেন বলে জানান তিনি।

বিরামহীন ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পটুয়াখালী জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আরও ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশালে অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। একই সঙ্গে নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে।

লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপ জেলা ভোলা ও আশপাশের নদীবেষ্টিত এলাকাগুলোর সঙ্গে বরিশালের নৌ যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। বন্ধ রয়েছে দৈনিক পত্রিকার সরবরাহও। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।