দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘চমকে ওঠার মতো’ সব সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তিনি অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা কিছু আইনের খসড়া প্রকাশ করেছেন। এসব নির্দেশনা অবৈধ অভিবাসন, জলবায়ুনীতি, গোপন নথি, জাতিগত বৈচিত্র্যের মতো বিতর্কিত বিষয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
সাধারণত একজন প্রেসিডেন্ট শপথগ্রহণের পর নতুন সব নির্দেশনা আসে। এগুলো আইন হিসেবে বিবেচিত হলেও নতুন প্রেসিডেন্ট এসে তা পরিবর্তন করতে পারেন। এবার ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কতটা বিস্তৃতভাবে এসব পরিবর্তন আনা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পরেছে অনেকের কপালে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ট্রাম্পের সম্ভাব্য এসব কার্যক্রম নিয়ে-
অভিবাসন এবং সীমান্ত
প্রথম দিন থেকেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডিপোর্টেশন প্রোগ্রাম চালু করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ফক্স নিউজের সংবাদ অনুযায়ী, তিনি ‘ন্যাশনাল বর্ডার ইমার্জেন্সি’ চালু করতে যাচ্ছেন যা দেশটির দক্ষিণ সীমান্তকে নিরাপত্তা দেবে।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে চার্চ ও স্কুলে অভিযান পুনরায় চালু করা হবে। এ বিষয়ক যে আইন ছিল সেটিতেও পরিবর্তন আনা হবে।
ট্রাম্প খুব দ্রুতই ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’(মেক্সিকোতে থাকো) নীতি গ্রহণ করবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে তিনি প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালীন মেক্সিকান নন এমন ৭০ হাজার আশ্রয় প্রার্থীকে সীমান্তের বাইরে বিচারিক শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল
ট্রাম্প ১৫০ বছর পুরনো সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আইনকে হাস্যকর বলেছেন। এ আইন অনুযায়ী কেউ আমেরিকার মাটিতে জন্ম গ্রহণ করলে তাকে আমেরিকার নাগরিক বিবেচনা করা হয়। ট্রাম্প প্রথম দিনেই এ আইন বাতিলের কথা বলেছেন।
১৯৪৪ সালের একটি আইন -‘টাইটেল ৪২’ অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে। মেক্সিকোর সীমান্ত ব্যবহারে এই আইনটিই ব্যবহার করতে চলেছেন ট্রাম্প। এর আগে করোনা মহামারির সময় এই আইন ব্যবহার করা হয়েছিল।
মাদক নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা
ট্রাম্প কুখ্যাত ড্রাগ কার্টেলগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে’ চিহ্নিত করতে চান। তিনি এসব কার্টেলকে আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট ও হামাসের সঙ্গে একই তালিকায় রাখতে চান।
সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেছিলেন তা পুরোপুরি নির্মাণে এবার সচেষ্ট হতে পারেন তিনি।
বাণিজ্য/ শুল
ট্রাম্প সাফ জানিয়েছেন, আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করবেন, যা আমেরিকার উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেবে।
ক্রিপ্টো মজুদ
ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তার নির্বাচনের পর বিটকয়েনের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশ। অনেকেই ধারণা করেছেন একটি ‘বিটকয়েন মজুদ ’ গড়ে তুলবেন তিনি। যেটি আমেরিকানদের উপকারে জাতীয় সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আবারও বেরিয়ে আসা
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেন। ২০২১ সালে বাইডেন প্রথম দিনেই এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনেন। তবে ট্রাম্প আবারও এই আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন।
ক্যাপিটল হিল
২০২১ সালে ক্যাপিটল হিল দখলের ঘটনায় শতাধিক অভিযুক্ত বর্তমানে ট্রাম্পের ক্ষমার আশায় রয়েছেন। এর আগে তিনি এসব বন্দিদের মুক্তির আশ্বাস দেন। সেসময় ১৫’শ আমেরিকানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৬০০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ অফিসারদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।
                                    
                                
গোপন নথি
রোববার বিজয় র্যালিতে ট্রাম্প বলেন, তিনি ১৯৬৩ সালে জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের গোপন নথি প্রকাশ করবেন। এটি হাজারো জল্পনা কল্পনার জন্ম দেবে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ১৯৬৮ সালে সংগঠিত সিনেটর রবার্ট কেনেডি এবং মানবাধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের হত্যাকাণ্ড নিয়েও নথি প্রকাশের কথা জানিয়েছেন তিনি।
পররাষ্ট্র নীতি/ ইউক্রেন যুদ্ধ
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন তিনি প্রেসিডেন্সির প্রথম দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান করবেন। এরপর তিনি বলেছেন, তার ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে। তবে  আসলে ট্রাম্প কী কী করতে চলেছেন তা এখনো পরিস্কার নয়।
কিউবা ও ভেনেজুয়েলা
বাইডেন প্রশাসন কিউবাকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারেন। এছাড়াও ভেনেজুয়েলার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আবার পুনর্বহাল করতে পারেন তিনি। প্রথমবারের শাসনামল থেকেই এ দুই দেশ ট্রাম্পের রক্তচক্ষুর শিকার হয়ে আসছে।
বৈচিত্র্য ও লিঙ্গ (ডিইআই)
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুতলো নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সহায়তায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে।
এসব নীতিকে সাধারণত ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি ’(ডিইআই) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু এসব নীতি অনেক রক্ষণশীলদের ক্ষোভের কারণ হয়েছে। তাদের মন জোগাতে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি এসব নীতি বাতিল করবেন।
গর্ভপাত
অন্যান্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মতোই ট্রাম্প ‘মেক্সিকো সিটি পলিসি’ পুনর্বহাল করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ আইন অনুযায়ী- আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা গর্ভপাত বিষয়ক কাউন্সেলিং করে থাকে তাদের এ জাতীয় কাজে বিধিনিষেধ দেওয়া হবে।
এছাড়া ট্রাম্প গর্ভপাত সংক্রান্ত একটি নিয়মও পুনর্বহাল করতে পারেন। এটি টাইটেল এক্স (নিম্ন আয়ের মানুষদের পরিবার পরিকল্পনা) নামের কর্মসূচির অধীনে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে গর্ভপাতের তথ্য উল্লেখ করা থেকে বিরত করবে। এ পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ইতোমধ্যেই গর্ভপাত ও রেফারেল প্রদানকারী সংস্থা থেকে কোটি কোটি ডলার কেটে নেওয়া হয়েছে।
ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ
খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে ট্রাম্প বরাবরই বিরূপ মন্তব্য করে আসছেন। স্কুল ও স্বাস্থ্য সেবায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণকে ‘ট্রান্সজেন্ডার উন্মত্ততা’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। ষ্পষ্টভাবে বলেছেন, খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করবেন তিনি।
টিকটক
রোববার সকালে, ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ বহাল করবেন বলে জানিয়েছেন যা টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞার নির্দেশকে বাতিল করবে। এর আগে ট্রাম্প টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিলেন। তবে সম্প্রতি তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় তার ভিডিওগুলো টিকটকে যে বিলিয়ন ভিউ পেয়েছিল,  সেটি তার এমন সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। 

 
                             
                                    

-20250121041202.jpg)
 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন