শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৩:২৭ এএম

চীনা নজরদারি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৩:২৭ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভারতে চীনা নজরদারি প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় সিসিটিভি শিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সাইবার ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার নজরদারি প্রযুক্তি নির্মাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া নতুন এক নিরাপত্তা নীতিমালায় সিসিটিভি নির্মাতাদের জন্য কড়া নিয়ম চালু করা হয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সব সিসিটিভি নির্মাতাকে তাদের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং সোর্স কোড ভারতের সরকার অনুমোদিত পরীক্ষাগারে জমা দিয়ে অনুমোদন নিতে হবে।

এ বিষয়ে রয়টার্সের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত মূলত চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর ভারতের উদ্বেগের ফল। ২০২১ সালে তৎকালীন ভারতীয় আইটি প্রতিমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন, সরকারি অফিসগুলোতে ব্যবহৃত প্রায় ১০ লাখ সিসিটিভির বেশিরভাগই চীনা কোম্পানির তৈরি ছিল এবং সেগুলোর ভিডিও তথ্য বিদেশি সার্ভারে স্থানান্তরিত হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছিল।

এই নতুন নীতিমালা চীনের হিকভিশন, দাহুয়া ও শাওমি, দক্ষিণ কোরিয়ার হানহোয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মটোরোলা সল্যুশনস-সহ সব আন্তর্জাতিক ও দেশীয় নির্মাতার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইন্টারনেট-সংযুক্ত সব ক্যামেরার ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য।

গত ৩ এপ্রিল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৭টি দেশি-বিদেশি নজরদারি প্রযুক্তি নির্মাতার সঙ্গে এক বৈঠক করে। হানহোয়া, মটোরোলা, বোশ, হানিওয়েল ও শাওমি-এর মতো কিছু কোম্পানি প্রস্তুতির অভাব দেখিয়ে আরও সময় চাইলেও ভারত সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি একটি বাস্তব নিরাপত্তা সংকট এবং এর বাস্তবায়নে বিলম্ব সম্ভব নয়।

ভারতের সাবেক সাইবার নিরাপত্তা প্রধান গুলশন রাই সতর্ক করে বলেছেন, ‘ইন্টারনেট-সংযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা সবসময় দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকিতে থাকে। এগুলো যথেষ্ট সুরক্ষিত না হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়বে।’

নির্মাতারা অভিযোগ করেছেন, পর্যাপ্ত পরীক্ষাগারের অভাব, কারখানা পরিদর্শনে বিলম্ব এবং সোর্স কোড বিশ্লেষণের জটিলতার কারণে অনুমোদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বর্তমানে ভারতের সিসিটিভি বাজারের মূল্য প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ যন্ত্রাংশই আসে চীন থেকে। চীনা কোম্পানি হিকভিশন ও দাহুয়ার সম্মিলিত মার্কেট শেয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ, যেখানে ভারতের স্থানীয় ব্র্যান্ড সিপি প্লাসের শেয়ার প্রায় ৪৮ শতাংশ।

দিল্লির একজন খুচরা বিক্রেতা সাগর শর্মা বলেন, ‘এই মাসে ক্যামেরা বিক্রি গত মাসের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এখন বড় অর্ডার নেওয়া যাচ্ছে না।’

নতুন নীতিমালায় প্রতিটি ক্যামেরাতে ট্যাম্পার-প্রুফ কাঠামো, শক্তিশালী ম্যালওয়্যার সনাক্তকরণ প্রযুক্তি এবং এনক্রিপশন ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্মাতাদের ক্যামেরার সোর্স কোড বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২৮ মে পর্যন্ত ৩৪২টি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩৫টির পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশি নির্মাতার মাত্র একটি ক্যামেরা অনুমোদন পেয়েছে।

চীনের শাওমি জানিয়েছে, তাদের কিছু যন্ত্রের অনুমোদন আটকে আছে, কারণ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে সীমান্তবর্তী দেশ থেকে আসা পণ্যের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তথ্য জমা দিতে হয়, যদিও সরকারি নিয়মে এমন কোনো ধারা নেই।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আমরা বিরোধিতা করি এবং আশা করি ভারত সরকার ন্যায্য, নিরপেক্ষ ব্যবসা পরিবেশ নিশ্চিত করবে।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র হিকভিশন ও দাহুয়ার পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করে। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াও চীনা নজরদারি যন্ত্রের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ভারতের কর্মকর্তারাও মনে করেন, ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ, চিপসেট ও সফটওয়্যারের উৎস পরীক্ষা ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের সিসিটিভি বাজার কতটা দ্রুত এই নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং এটি আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা দেখার বিষয়।

Link copied!