যুক্তরাষ্ট্র-চীন শিক্ষার্থী ভিসা উত্তেজনার মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং'র একমাত্র মেয়ে শি মিংজে। ইতোমধ্যেই তার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে অবস্থান করছেন- এমন গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে ‘ম্যাগা’ ঘরানার কট্টরপন্থী অ্যাকটিভিস্ট লরা লুমার এবার সরাসরি বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘শি জিনপিংয়ের মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হোক।’ তার ভাষায় - ‘কমিউনিস্টরা এ দেশে থাকার যোগ্য নয়।’
২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন শি মিংজে, তবে গোপন রাখতে ব্যবহার করেন ছদ্মনাম। তখনও তার উপস্থিতি ছিল গোপনীয়তার চাদরে ঢাকা।
২০১৯ সালে তিনি আবারও হার্ভার্ডে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নে ফিরেছেন- এমন দাবি ঘুরছে অনলাইনজুড়ে, যদিও এর কোনো সরকারি নিশ্চয়তা নেই। বরং চীন সরকার তার অবস্থান নিয়ে সবসময় কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখেছে।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যেসব চীনা শিক্ষার্থী চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বা রোবোটিক্সের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে পড়ছেন, তাদের ভিসা ‘আক্রমণাত্মকভাবে’ বাতিল করা হবে।
এই প্রেক্ষাপটে লুমারের মন্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে। তিনি বলেন, ‘আমার সূত্র বলছে, শি মিংজেকে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) নিরাপত্তারক্ষীরা মার্কিন মাটিতে পাহারা দিচ্ছে।’
তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, ‘শিগগিরই আমি শি মিংজের মুখোমুখি হব। তাকে ক্যামেরার সামনে তার বাবার নীতিমালার বিষয়ে প্রশ্ন করব।’ এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠে গেছে।
চীন অবশ্য এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত সিদ্ধান্ত, যা চীনা শিক্ষার্থীদের আইনসঙ্গত অধিকার হরণ করে এবং দুই দেশের মানুষে-মানুষে সম্পর্কের সেতুবন্ধন ধ্বংস করে।’ চীন এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মার্কিন রাজনীতির ভেতরে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্য করে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার ২৭% থেকে কমিয়ে ১৫%-এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয়েছে, ছাত্রদের জাতীয়তা সংক্রান্ত পূর্ণ তথ্য সরকারকে জমা দিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন- যদি সাধারণ চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল হয়, তাহলে চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির মেয়ের ক্ষেত্রে কী হবে? তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। সবকিছু নির্ভর করছে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এবং শি মিংজের প্রকৃত উপস্থিতির সত্যতা ও তার ভিসার ধরন অনুসারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বুকে এই বিতর্ক নিঃসন্দেহে চীন-মার্কিন সম্পর্কে আরও উত্তেজনা ছড়াতে চলেছে- এ কথা বলাই যায়।
আপনার মতামত লিখুন :