ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার শিক্ষা ব্যবস্থা। যুদ্ধ ও সহিংসতার কারণে উপত্যকার প্রায় ৭ লাখ ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী মৌলিক শিক্ষার অধিকার থেকেও বঞ্চিত। গাজার উপ-শিক্ষামন্ত্রী ড. খালেদ আবু আল-নাদা একে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষাব্যবস্থার কোনো স্তরই এখন নিরাপদ নয়। এ সব প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য কেবল অবকাঠামো নয়, ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ ও পরিচয় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।’
জাতিসংঘ সমর্থিত এডুকেশন ক্লাস্টারের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২১২টি স্কুলে সরাসরি বিমান হামলা হয়েছে এবং আরও ২৮২টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক স্কুল পরিণত হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে, যেখানেও রয়েছে বোমাবর্ষণের ঝুঁকি।
একসময় যেসব বিদ্যালয়ে ৫ লাখ ৩ হাজার শিক্ষার্থী ও প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষক পড়াশোনা ও পাঠদান করতেন, সেসব প্রতিষ্ঠান এখন ভস্মীভূত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থাও করুণ-গাজার ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪টি পুরো ধ্বংস হয়েছে, ১০টি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত।
সম্প্রতি খান ইউনিসের ইসলামিক ইউনিভার্সিটির একটি শাখাও ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় একটি গোটা প্রজন্ম পড়াশোনার ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি যুদ্ধ থেমে গেলেও তারা আর পূর্বের শিক্ষাজগতে ফিরতে পারবে কিনা-সেটি অনিশ্চিত।
গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এবং ২৬১ জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন।
তবুও বিকল্প উপায়ে শিক্ষাপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কোথাও তাঁবুতে, কোথাও খোলা মাঠে চলছে ক্লাস। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় চলছে সীমিত অনলাইন পাঠদান। কিন্তু সহিংস পরিবেশ ও যোগাযোগব্যবস্থার বিপর্যয়ের কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ৩.৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কোনো শিক্ষা পাচ্ছে না, যা আগামী দিনে গাজার সাক্ষরতার হার ও সামগ্রিক উন্নয়নে ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
নিরাপদ পরিবেশ, খেলাধুলা, বন্ধুত্ব-সব কিছু হারিয়েও গাজার শিশুরা এখনো স্বপ্ন দেখে স্কুলে ফেরার। তারা জানায়, ‘পুষ্টিকর খাবারের চেয়েও বড় চাওয়া হলো, আবার স্কুলে যাওয়া।’
গাজার বাস্তুচ্যুত এক বাবা মাহের বলেন, ‘আমার সন্তান বলেছে, আমি স্কুলে যেতে চাই, আগের জীবনে ফিরতে চাই।’ এ চাওয়াই তাদের জীবনে এখন আশার শেষ আলো।
গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরব ও ইসলামি বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে-ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করা, ধ্বংস হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক দায় নয়, একটি মানবিক দায়িত্ব।
আপনার মতামত লিখুন :