ঢাকা শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সিদ্ধান্তে অনড় ইরান

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি- সংগৃহীত

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তেহরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ত্যাগ করবে না। একইসঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।

বুধবার (৪ জুন) দেওয়া এক ভাষণে খামেনি এই মন্তব্য করেন, যখন ওয়াশিংটন ও তেহরান সম্ভাব্য নতুন পারমাণবিক চুক্তির বিশদ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

আলোচনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি একটি বাধাগ্রস্ত বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে সম্পূর্ণ বন্ধ বা নিম্ন-স্তরের সমৃদ্ধকরণ দাবি করেছে বলে জানা গেছে।

১৯৮৯ সালে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুবার্ষিকীতে খামেনি বলেন, ‘‘মার্কিন পারমাণবিক প্রস্তাব আমাদের জাতির আত্মনির্ভরশীলতার বিশ্বাস এবং ‘আমরা পারি’ এই নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

তিনি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি ইরানের জ্বালানি স্বাধীনতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি। স্বাধীনতা মানে হলো আমেরিকা ও আমেরিকার মতো দেশগুলোর কাছ থেকে সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা না করা। মার্কিন প্রস্তাব ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের আদর্শের ‘শতভাগ বিরুদ্ধে’।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘তেহরান তার সিদ্ধান্তের জন্য ওয়াশিংটনের অনুমোদন চাইবে না। কিছু লোক মনে করে যে, যুক্তিবাদিতা মানে আমেরিকার কাছে মাথানত করা এবং অত্যাচারী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করা; এটি যুক্তিবাদিতা নয়। ইরানের সমৃদ্ধকরণ করা উচিত কি না তা নিয়ে আপনি (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) কেন হস্তক্ষেপ করছেন? আপনার কোনো বক্তব্য থাকতে পারে না।’

গত সোমবার একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তেহরান কয়েক দশক ধরে চলমান পারমাণবিক বিরোধের অবসান ঘটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে প্রস্তুত। প্রস্তাবটি ‘অপ্রযোজ্য’।

তেহরান বলেছে, তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে চায়। এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে ইরান।

ইরানের সঙ্গে আলোচনায় আমেরিকান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেহরানের যেকোনো সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার বিরোধিতা করছেন, এটিকে ‘রেড লাইন’ বলে অভিহিত করেছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইরান গত তিন মাসে অস্ত্র-গ্রেডের কাছাকাছি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। তবে, পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশের তুলনায় এটি এখনো কম, কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ৪ শতাংশের তুলনায় এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি সম্পূর্ণ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি’ মাত্র।