কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কয়েক সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো জম্মু ও কাশ্মীর সফরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরে তিনি একাধিক বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পের উদ্বোধন করেন, যা কাশ্মীর উপত্যকার যোগাযোগ ও অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (৬ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেললাইন (USBRL) প্রকল্পের উদ্বোধন। তিন দশকের পুরনো এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো চেনাব রেল সেতু, যা এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল আর্চ সেতু, এবং অঞ্জি খাদের উপর নির্মিত ভারতের প্রথম কেবল-স্টে রেল সেতু।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে মোদি শুক্রবার সকালে চেনাব সেতু উদ্বোধনের পর ট্রেনে করে কাত্রা যাবেন এবং পথে অঞ্জি সেতু পরিদর্শন করবেন। তিনি প্রকল্পে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন।
কাত্রায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী বারামুল্লা থেকে কাত্রাগামী এবং বিপরীতমুখী দুটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করবেন। এই ট্রেন দুটি আগামী ৭ জুন থেকে সপ্তাহে ছয়দিন চলবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন সম্প্রতি ২২ এপ্রিল পাহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ওই হামলার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ১৪০ কোটির ঐক্য ও সংহতি।’
তিনি আরও জানান, ভারতের জবাব হবে ‘সিদ্ধান্তমূলক’ এবং ‘সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের’ দেওয়া হবে ‘সবচেয়ে কঠোর শাস্তি’।
এই সফর এমন এক সময় হলো, যখন নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে বড়সড় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে।
চেনাব সেতুটি রেয়াসি জেলার কাউরি ও বক্কাল গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত, যার উচ্চতা ৩৫৯ মিটার, যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার বেশি। দৈর্ঘ্য ১,৩১৫ মিটার। এটি ২৬০ কিমি/ঘণ্টা গতির বাতাস সহ্য করতে সক্ষম এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধী প্রযুক্তিতে নির্মিত। এর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১২০ বছর। নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১,৪৮৬ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পে রয়েছে মোট ৯৪৩টি সেতু ও ৩৬টি সুড়ঙ্গ, যার মধ্যে ১২.৭৭ কিমি দীর্ঘ T-৫০ টানেলটি ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ রেল সুড়ঙ্গ।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, বারামুল্লা থেকে জম্মু পর্যন্ত মোট পাঁচটি টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে, যা কাশ্মীরের ফল, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের পরিবহন সহজ করবে।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে কাশ্মীর থেকে ট্রেনে চেরি পরিবহন সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি আরও বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারিত হবে।
নতুন রেললাইন চালু হলে কাশ্মীরে যাতায়াতের জন্য জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়কের ওপর নির্ভরতা কমবে, যা প্রায়ই ধস বা তুষারপাতের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে বিমানের ভাড়াও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :