ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে চালানো আকস্মিক হামলায় নিন্দা জানালেও ইরানের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কোনো আরব দেশ। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো ইরানকে দুর্বল দেখতেই বেশি আগ্রহী। কেননা, এসব দেশের ভূখণ্ডে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে চায় না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক সানাম ভাকিল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে ধিক্কার জানালেও অনেকেই মনে মনে তেহরানকে দুর্বল দেখলেই বেশি খুশি হবে। কূটনৈতিক চাপের কারণে দেশগুলো দ্বিমুখী আচরণ করছে। তারা কেউই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। আবার ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে নিজেদের যে মাশুল গুনতে হবে, তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়নের অধ্যাপক করিম বিতার বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো বুঝতে পারছে যে, এই ইসরায়েলি আক্রমণ তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের পাশাপাশি সমগ্র স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করবে।
শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব নিন্দা জানায়। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত, বাহরাইনসহ অন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোও একই পথে হাঁটে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নিন্দা মূলত প্রতীকী, বাস্তবে তেহরানের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা নেই কারো।
এদিকে, হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদেরও প্রায় নিষ্ক্রিয় করে তুলেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে একাধিক হামলায় এসব গোষ্ঠীর বহু যোদ্ধা নিহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে তাদের অস্ত্রভাণ্ডার। এর ফলে কার্যত একা হয়ে পড়ছে তেহরান।
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলছে জর্ডান ও মিশর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় এ দুই দেশও সংঘাতে জড়াতে চায় না।
এদিকে, জরুরিভিত্তিতে উত্তেজনা প্রশমন ও ‘বাছবিচারহীনভাবে’ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে মিসরের নেতৃত্বাধীন ২১টি মুসলিম দেশের একটি গ্রুপ।
গ্রুপটি সতর্ক করে বলেছে, সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান তাদের। তারা মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার জন্য তাদের সমর্থন প্রকাশ করে এবং এই অঞ্চলের সব রাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো- আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনেই, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিসর, গাম্বিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আপনার মতামত লিখুন :