ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র, তথ্যদ্বন্দ্বে মার্কিন-ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলার পর দেশটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, ইরান দ্রুত এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে, যেখান থেকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টা আর ফেরানো সম্ভব নয়। ইসরায়েল এই দাবি করে হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছে। মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্রিয় চেষ্টা করছে না এবং একটি সম্পূর্ণ অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনে তারা এখনো প্রায় তিন বছর দূরে।

এদিকে, আরেকজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তারা যদি চায়, তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য।’

গত শুক্রবার ইসরায়েল নাতানজের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে সক্ষম হলেও, সবচেয়ে সুরক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ ফোর্ডো স্থাপনা এখনো অক্ষত রয়েছে। এই গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনাটি ধ্বংস করার সক্ষমতা ইসরায়েলের নেই বলে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের পারমাণবিক ধ্বংস করতে হলে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ধরনের বোমা ও বি-২ বোমারু বিমান।

প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক ও বিশ্লেষক ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, ‘ফোর্ডোকে সত্যিকার অর্থে ধ্বংস করতে হলে তা কেবল মার্কিন সামরিক শক্তির মাধ্যমেই সম্ভব।’

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, ‘ইসরায়েলের এই আংশিক হামলা ইরানকে আরও আগ্রহী করে তুলতে পারে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে।’

এদিকে, ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নিয়েছে, তা ইরানের গোপন ইউরেনিয়াম অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনার প্রমাণ বহন করে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এমন সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইরান সত্যিই গোপনে ইউরেনিয়াম অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক বক্তব্যে বলেন, ‘ইরান দ্রুত এগোচ্ছে, আমরাও এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।’

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়ে জানান, ‘ইরান ২০০৩ সালে স্থগিত করা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এখনো পুনরায় শুরু করেনি এবং সর্বোচ্চ নেতা খামেনি কোনো নতুন অনুমোদন দেননি।’

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’

বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থান ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিধার পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে একটি ব্যয়বহুল ও জটিল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে।

তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, আমেরিকাকে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংসে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি জড়াতে চান না।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন স্বীকার করেছে, ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চায়, তাহলে একমাত্র উপায় হলো মার্কিন সামরিক সহায়তা।

সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে বি-২ বোমারু বিমান এবং বিশেষ মার্কিন বোমার প্রয়োজন।

এই প্রসঙ্গে রোববার (১৫ জুন) সকালে ট্রাম্প এবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা এই হামলার সঙ্গে জড়িত নই। তবে জড়িত হতে পারি। এই মুহূর্তে আমরা জড়িত নই।’

সোমবার (১৬ জুন) কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েলকে ‘অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই’ আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

তবে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলি হামলার মুখে তারা কোনো আলোচনায় অংশ নেবে না।

অন্যদিকে, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলা এবং কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ইসরায়েলকে রক্ষা ও সমর্থনে আরও মার্কিন সামরিক সম্পদ মোতায়েনের অনুরোধ করেছেন।

তবে তারা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার জন্য নয়।

জেনারেল কুরিলা বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

এ সময় তিনি ইসরায়েলের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক শক্তি মোতায়েনের ইঙ্গিত দেন।