ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

কেন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভু ভাবছে ইসরায়েল?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ০২:২৮ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভু ভাবছে ইসরায়েল (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু)। প্রতীকী ছবি

বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। সামরিক, অর্থনৈতিক কিংবা কূটনৈতিকসহ সব স্তরেই ইসরায়েল যেন যুক্তরাষ্ট্রের এক অদৃশ্য ছায়ার আশ্রয়ে রয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক আজ এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ওয়াশিংটন ছাড়া তেল আবিবের বড় কোনো পদক্ষেপ কল্পনাই করা যায় না। 

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কিংবা ফিলিস্তিন প্রশ্নে আমেরিকার ভূমিকা ইসরায়েলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আবারও সামনে এসেছে। কেন ইসরায়েল নিজেকে এতটা যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর ভাবছে? কীভাবে গড়ে উঠেছে এই ‘প্রভু-ভৃত্য’ সম্পর্ক?

অস্তিত্বের শুরু থেকেই নির্ভরতা

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আমেরিকার সমর্থন ছিল অন্যতম প্রধান ভিত্তি। তখন থেকেই রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।

সামরিক সহায়তা

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিক অনুদান পায় ইসরায়েল—যার বৃহত্তম অংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রতি বছর প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার (৩৮০ কোটি ডলার) সামরিক সহায়তা পায় তারা। এই অর্থে আধুনিক যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট নজরদারি ইত্যাদি তৈরি করে।

 কূটনৈতিক সুরক্ষা

জাতিসংঘ বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে যখনই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়, তখন প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়। এই কারণে ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে অনেক শাস্তি থেকে রক্ষা পায়।

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সুবিধা

যুক্তরাষ্ট্র শুধু সামরিক নয়, ইসরায়েলকে উন্নত প্রযুক্তি, গবেষণা অনুদান, কৃষি ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ব্যাপক সহায়তা দেয়। এতে ইসরায়েলি অর্থনীতি অনেকখানি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত।

 রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইসরায়েলপন্থি লবি খুব শক্তিশালী। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলই এই পৃষ্ঠপোষকতায় অংশ নেয়। এতে ইসরায়েল বুঝে গেছে, তাদের টিকে থাকার ও আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য আমেরিকার রাজনৈতিক সমর্থন অপরিহার্য।

পারমাণবিক ছায়া

ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র না হলেও, অঘোষিতভাবে এর অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নীরব সম্মতি দেয়। ফলে ইসরায়েল আরও নির্ভীকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য জাহির করতে পারে।

মনস্তাত্ত্বিক কারণ

দীর্ঘদিনের এই নির্ভরতাজনিত কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভু ভাবার একরকম মানসিকতা গড়ে উঠেছে। তারা জানে, যেকোনো সংকটে, রাজনৈতিক বা সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রই তাদের শেষ ভরসা। তাই অনেক সময় নিজেরাও এই ছায়ায় থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।