মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কৌশলগত উপস্থিতির সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হলো কাতারের ‘আল উদেইদ’ বিমানঘাঁটি। এই ঘাঁটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং গোটা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে নজরদারি, অভিযান পরিচালনা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার এক প্রধান নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
দোহা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই ঘাঁটির নির্মাণ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে, এবং ২০০৩ সাল থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার শুরু করে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা ও সমর্থিত জোট বাহিনীর সদস্য অবস্থান করছেন।
ঘাঁটির মূল সুবিধাসমূহ:
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) ও কম্বাইন্ড এয়ার অপারেশনস সেন্টার (CAOC) এখান থেকেই পরিচালিত হয়।
ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা অঞ্চলে বিমান অভিযান ও ড্রোন মিশনের নিয়ন্ত্রণ হয় এখান থেকে।
ঘাঁটিতে রয়েছে ১৫ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে-যা অঞ্চলটির মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং ভারী বিমান অবতরণের উপযোগী।
B-52, F-15, F-22, KC-135 Stratotanker ও ড্রোনসহ রয়েছে আধুনিক ও ভারী সামরিক বিমানবহর।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল:
আল উদেইদ ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান, পারস্য উপসাগর, এবং রেড সি অঞ্চলজুড়ে তৎপরতা চালাতে সক্ষম করে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও গোয়েন্দা নজরদারির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ঘাঁটিটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরের মিত্র দেশগুলো যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে যৌথ মহড়া ও সমন্বিত প্রতিরক্ষা কৌশল পরিচালনা করে থাকে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা রক্ষায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
কাতারের বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক সম্পর্ক:
কাতার সরকার এই ঘাঁটির অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সেনাদের আবাসস্থল, আধুনিক অপারেশনস সেন্টার, রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং নিরাপত্তা অবকাঠামো। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিনিয়োগ কাতার-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে এবং দেশটিকে পশ্চিমা মিত্রতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গড়ে তুলেছে।
রাজনৈতিক বার্তা:
২০১৭ সালে যখন কাতার প্রতিবেশী দেশগুলোর (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর) সঙ্গে কূটনৈতিক সংকটে পড়ে, তখন যুক্তরাষ্ট্র কাতারে এই ঘাঁটির কারণে সরাসরি অবস্থান নেয়নি, কিন্তু ঘাঁটিটি বন্ধও করেনি। বরং এতে বোঝা যায়, আল উদেইদ ঘাঁটি কেবল একটি সামরিক স্থাপনা নয়, বরং এটি এক ধরনের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো কাজ করে কাতারের জন্য।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, সিএনএন, পেন্টাগন রিপোর্ট, কাতার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন