মহাকাশ গবেষণা সংস্থার নাসার প্রস্তাবিত বাজেট কমানোর বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংস্থাটির সাবেক প্রধান বিল নেলসন। তিনি বলেছেন, ‘নাসা এখন নির্যাতনের শিকার। যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে এটি একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়বে।’
১৯৭২ সালের পর প্রথমবারের মতো আবার মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোর জন্য ‘আর্টেমিস’ নামে একটি বিশাল প্রকল্প চালু করেছে নাসা। এর সঙ্গে যুক্ত আছে চাঁদের কক্ষপথে একটি ছোট মহাকাশ স্টেশন তৈরি করার পরিকল্পনাও, যার নাম ‘লুনার গেটওয়ে’। কিন্তু নতুন বাজেট প্রস্তাবে এই সব কিছুই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী, নাসার বার্ষিক বাজেট ২৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৮ দশমিক ৮ বিলিয়নে নামিয়ে আনা হবে। এতে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বরাদ্দ অর্ধেকের বেশি কমে যাবে।
কেন এই বাজেট কমানো?
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ হবে, কম ফলপ্রসূ প্রকল্প বন্ধ হবে এবং বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে বেশি সাশ্রয়ী ও আধুনিক মহাকাশ অভিযান পরিচালনা সম্ভব হবে। প্রশাসনের মতে, বর্তমান ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম’ বা এসএলএস রকেটের প্রতি উৎক্ষেপণ খরচ ৪ বিলিয়ন ডলার, যা খুব ব্যয়বহুল।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই বাজেট ছাঁটাই আমেরিকার মহাকাশ বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বের জন্য এক বিশাল ধাক্কা হতে পারে। পাশাপাশি জলবায়ু উপগ্রহ প্রকল্পও বাদ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে, যা পরিবেশ গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ইউরোপ-আমেরিকা মহাকাশ অংশীদারত্বে প্রভাব
নাসার সঙ্গে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএ-এর অংশীদারিত্ব রয়েছে। ইএসএ ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পে ৮৪০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে এবং আরও ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই অংশীদারিত্বের ফলে তিনজন ইউরোপীয় মহাকাশচারী চাঁদে যাওয়ার কথা। এখন বাজেট কাটা গেলে এসব পরিকল্পনা থেমে যেতে পারে।
স্পেসএক্স ও ইলন মাস্ক
স্পেসএক্স এখনো নাসার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তবে ইলন মাস্ক এরই মধ্যে ট্রাম্পের কিছু বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন এবং ফেডারেল সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি ট্রাম্প বলছেন, ‘বাজেট বাঁচাতে হলে ইলনের সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।’
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
নাসার সাবেক প্রধান নেলসন বলেছেন, ‘এটা যেন নিজেদের ভবিষ্যতের বীজ ভুট্টা খেয়ে ফেলার মতো। যদি এখন বিনিয়োগ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের হাত খালি থাকবে।’
অন্যদিকে, বর্তমান প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজেট প্রস্তাবে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং প্রেসিডেন্ট নাসার মিশনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউরোপের সতর্কতা
ইএসএ-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এমন প্রকল্প চাই যেগুলোর সিদ্ধান্ত আমরাই নিতে পারি, আমেরিকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল না হয়ে।’
ভবিষ্যৎ কী?
এখন প্রশ্ন হলো এই বাজেট ছাঁটাই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি না? সিনেটর টেড ক্রুজ, যিনি নাসার বাজেট তদারকি করেন এবং আগে আর্টেমিস মিশনের সমর্থক ছিলেন, তিনি সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তাই আগামী অক্টোবরের মধ্যে বাজেট অনুমোদন হবে কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।
নাসার বাজেট কমানোর এই প্রস্তাব শুধু একটি মহাকাশ সংস্থার জন্যই হুমকি নয়; এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ভবিষ্যতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ অব্যাহত রাখে, নাকি আদর্শিক কৌশলের নামে পেছনে সরে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :