সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০২:২২ পিএম

আদানির তিন জন্মদিনের রহস্য

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০২:২২ পিএম

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। ছবি- সংগৃহীত

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। ছবি- সংগৃহীত

গৌতম আদানি বছরে তিনটি জন্মদিন পালন করেন। একটি তার প্রকৃত জন্মদিন এবং বাকি দুইটা হলো যেদিনগুলো তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ফিরে আসেন। এই তিনটি দিন—তার কাছে তিনবার নতুন করে জন্ম নেওয়ার মতো।

গত সপ্তাহেই নিজের ৬৪তম জন্মদিন পালন করলেন ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক তার তিন জন্মদিনের বিস্তারিতঃ-

প্রথম জন্মদিন: প্রকৃত জন্মদিন

১৯৬২ সালের ২৪ জুন আহমেদাবাদের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম হয় গৌতম আদানির। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। তার বাবা ছোটখাটো একটি কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই গৌতম শিখেছিলেন পরিশ্রমের মূল্য, আদর্শে স্থির থাকার শিক্ষা এবং নিজের চেষ্টা দিয়েই ভাগ্য গড়ার বিশ্বাস।

শেঠ চিমনলাল নাগিন্দাস বিদ্যালয়ে পড়াশোনার যাত্রা শুরু হয় তার। তবে ১৬ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তিনি। তারপর মুম্বাই চলে আসেন তিনি। 

মুম্বাইয়ে তার কর্মজীবনের শুরু হয় একটি হীরা বাছাইকারী হিসেবে। এই পেশা তাকে শিখিয়েছে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ, ধৈর্য আর ক্ষুদ্র মুনাফায় বৃহৎ সাফল্য অর্জনের কৌশল। বুঝিয়ে দিয়েছে গতি আর মনোযোগের গুরুত্ব এবং হিসাবের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি গড়ে তোলেন নিজের ডায়মন্ড ব্রোকারেজ ব্যবসা, আর এখান থেকেই মেলে জীবনের প্রথম বড় চুক্তির সাফল্য।

তবে ভাগ্য যেন তাকে হীরার জগৎ থেকে সরিয়েই আনতে চেয়েছিল।

১৯৮১ সালে তিনি ফিরে আসেন আহমেদাবাদে, বড় ভাইয়ের প্লাস্টিকের কারখানায় কাজের টানে। দেখতে সাধারণ মনে হলেও, এই ছোট উদ্যোগটিই হয়ে ওঠে তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। প্লাস্টিকের মূল উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) আমদানির মধ্য দিয়ে তিনি প্রবেশ করেন বৈশ্বিক বাণিজ্যের দুনিয়ায়।

এর ঠিক সাত বছর পর, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আদানি এক্সপোর্টস—যা পরবর্তীতে রূপ নেয় সুবিশাল আদানি গ্রুপে। শুরুতে এটি কৃষিপণ্য ও বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত জিনিসের বাণিজ্যে যুক্ত ছিল।

নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ভারতের অর্থনীতির উন্মুক্তকরণ গৌতম আদানির স্বপ্নে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। এই পরিবর্তনে তার প্রতিভা আর বিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় একধরনের কঠিন মানসিক দৃঢ়তা—যা যেকোনো প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার শক্তি এনে দেয় তাকে।

দ্বিতীয় জন্মদিন: অপহরণ থেকে বেঁচে ফেরার দিন

১ জানুয়ারি ১৯৯৮ আদানির ২য় জন্মদিন। এদিন তিনি আহমেদাবাদের কারনাবতী ক্লাব থেকে বের হওয়ার পথে অপহৃত হন। সে সময় তার সহকর্মী শান্তিলাল প্যাটেলও ছিলেন তার সঙ্গে।

যদিও অপহরণের সব তথ্য উন্মোচিত হয়নি; তবে আদানি ঠান্ডা মাথায় কৌশল অবলম্বন করে অপহরণকারীদের সঙ্গে তাস খেলতে (সম্ভবত রামি) শুরু করেন এমনটি শুনতে পাওয়া যায়।

ব্যক্তিগত বিপর্যয় হোক কিংবা জটিল ব্যবসায়িক পরিস্থিতি, প্রতিবারই তিনি যেন রণকৌশলের একজন দক্ষ খেলোয়াড়ের মতো পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন। সম্ভাব্য পরাজয়কে বদলে দিয়েছেন সাহসিকতা ও স্থিতধী মনোভাবের এক অনন্য কাহিনিতে।

তৃতীয় জন্মদিন: ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে ফেরা

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন তিনি। তখনই ঘটে মুম্বাইয়ের ইতিহাসের বিখ্যাত সন্ত্রাসী হামলা। তার সঙ্গে ছিলেন দুবাই পোর্টের সিইও মোহাম্মদ শরাফ।

খাবার শেষে কফি খাওয়ার সিদ্ধান্তই বাঁচিয়ে দেয় তাদের জীবন। নয়তো বিল মিটিয়ে লবিতে গেলেই সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হতে হতো তার।

সন্ত্রাসী হামলায় চারদিকে যখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আদানি তখন ঠান্ডা মাথায় হালকা হাসি ছড়িয়ে দেন ও ধৈর্যের আহ্বান জানান। নারীদের আগে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানোর এবং বৃদ্ধদের সহায়তার বিষয়েও তিনি বিশেষভাবে নজর দেন। নিজে আশ্রয় নেওয়ার আগে নিশ্চিত হন সবাই নিরাপদ আছে কি না।

গুলির শব্দ বেড়ে গেলে, তিনি চারজনসহ একটি ছোট বাথরুমের কিউবিকলে গাদাগাদি করে আশ্রয় নেন। নিশ্বাস আটকে, শরীরের প্রতিটি পেশি থম ধরে অপেক্ষা করছিলেন—জানতেন না বাঁচবেন কি না।

গুলির মাঝে এক ফাঁকে ফোন করেন ক্যাপ্টেন মেহতাকে। তখনই জানতে পারেন, পুরো রেস্টুরেন্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

পরে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কি ভয় পেয়েছিলেন?’ আদানির উত্তর ছিল বাস্তববাদী। ‘হ্যাঁ, ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু ভেঙে পড়িনি। যদি আমার সময় হতো, তবে নিয়তি আমাকে নিয়ে যেত,’ বলেন তিনি।

গৌতম আদানির এই তিন ‘জন্মদিন’ কেবল একজন সফল ব্যবসায়ীর গল্প নয় এটি এক অসম সাহসিকতা এবং অদম্য মানসিকতার জয়গাথা।

যতই ঝুঁকিপূর্ণ অথবা বিপজ্জনক পরিস্থিতি হোক না কেন তিনি অসাধারণ সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। নিজেকে আরও দৃঢ় করে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করেন তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!