ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ট্রাম্পের হলো এ কী রোগ?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরীরে রক্ত সঞ্চালনজনিত একটি সাধারণ সমস্যা ধরা পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক এক স্মারকলিপিতে জানান, ‘ট্রাম্প দীর্ঘস্থায়ী শিরার রক্ত চলাচলের ঘাটতি’ (ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি) নামক সমস্যায় ভুগছেন।

ট্রাম্পের এই রোগটি  ‘৭০ বছরের বেশি বয়সি অনেক মানুষের মধ্যেই দেখা যায়,’ বলে জানান হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট। যেখানের ট্রাম্পের বয়স ৭৯ বছর।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্পের পায়ের নিচের অংশে ‘হালকা ফোলাভাব’ দেখা দিলে চিকিৎসকেরা তাকে একটি ‘পরীক্ষা’ দেন।

এ রোগ বিষয়ে চিকিৎসক ড. শন বারবাবেলা তার স্মারকলিপিতে জানান, ‘পরীক্ষায় ট্রাম্পের শরীরে গভীর শিরা থ্রম্বোসিস বা ধমনীজনিত রোগের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তবে তিনি কবে এই পরীক্ষা করিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।’

কেন হয় এই রোগ?

ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি (সিভিআই) তখনই হয় যখন পায়ের শিরাগুলো রক্তকে যথাযথভাবে হৃদপিণ্ডের দিকে ফেরত পাঠাতে পারে না। ফলে নিচের পায়ের অংশে, বিশেষ করে গোড়ালি ও পায়ের পাতায় রক্ত জমে যায়। 

এ অবস্থায় পা ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন: ভারী ভাব, ব্যথা, ঝিঝি ধরা কিংবা অস্বস্তিকর অনুভূতি। অনেকের ক্ষেত্রে উঁচু শিরা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছালে পায়ে ঘা বা আলসারও হতে পারে।

টেক্সাস ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মেরিল লোগান বলেন, “পায়ের শিরা ও ভাল্ব রক্তকে উপরের দিকে ঠেলে হৃদপিণ্ডে পাঠানোর কাজ করে। কিন্তু এই ভাল্ব কাজ না করলে রক্ত উল্টো দিকেই নামতে শুরু করে। একে বলা হয় ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি।”

তিনি আরও বলেন, “পা থেকে রক্তকে ওপরের দিকে তুলতে হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। এ কারণে এই প্রক্রিয়াটি শারীরিকভাবে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।”

কীভাবে চিহ্নিত হয়?

পায়ের রক্ত উপরের দিকে অর্থাৎ হৃদপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে গেলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করতে হয়। এটা শরীরের জন্য কঠিন কাজ। বিশেষ করে যখন কেউ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে। পায়ের শিরাগুলোর ভেতরে একমুখী ভাল্ব থাকে। সেগুলো রক্তকে নিচে নেমে যেতে বাধা দেয়। 

এই ভাল্বগুলোর ক্ষতি বা কার্যক্ষমতা নষ্ট হলে রক্ত ঠিকমতো ওপরে উঠতে পারে না। ফলে তখনই ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি তৈরি হয়।

এই অবস্থার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন: অতীতে রক্ত জমাট বাঁধা, শিরায় প্রদাহ বা অতিরিক্ত ওজন। এসব কারণ শিরার ভাল্বগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

চিকিৎসা কী?

প্রথমেই চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন আরও গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যাগুলো বাদ দিতে। যেমন হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা অথবা পায়ে রক্ত জমাট বাধার মতো কারণ। এরপর আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে পায়ের শিরাগুলোর অবস্থা যাচাই করা হয়। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় রোগীর ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি আছে কি না।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে: কমপ্রেশন স্টকিংস পরা, যা পায়ের শিরায় চাপ দিয়ে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। পা উপরের দিকে তুলে রাখা, যাতে রক্ত নিচে জমে না থাকে। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে হাঁটা, অত্যন্ত কার্যকর বলে চিকিৎসকেরা জানান। হাঁটার সময় পায়ের পেশিগুলো সংকুচিত হয়ে শিরার ওপর চাপ সৃষ্টি করে, ফলে রক্ত সহজেই উপরের দিকে ওঠে এবং শিরার কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক থাকে।