রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে থাকা চীনা এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৩ সালের পর থেকে চীন আর এই বিমানের উৎপাদন করে না। বিশ্বের কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ না করলেও পুরোনো প্রযুক্তি ও বারবার দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় বিশ্বজুড়ে বিমানটির ব্যবহার কমে গেছে।
বর্তমানে চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না চীনা এই বিমান। সামরিক নিরাপত্তা বিশ্লেকরা বলছেন, আধুনিক যুদ্ধের জন্যও উপযুক্ত নয় এফ-৭। পাশাপাশি এই বিমানের নিরাপত্তা রেকর্ড নিয়ে বিশ্বজুড়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।
পশ্চিমারা কেন এফ-৭ বিমান ব্যবহার করে না
বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতায় পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে চীনের তৈরি সামরিক সরঞ্জামের ব্যবহারে বিধি-নিষেধ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য ও তাদের মিত্র দেশগুলোতে চীনের সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
চীনের চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো সাধারণত চীনা প্রযুক্তির ওপর আস্থা রাখে না। সাইবার নিরাপত্তা ও ইন্টেলিজেন্স ঝুঁকির কারণে তারা চীনা প্রযুক্তিকে এড়িয়ে চলে।
পশ্চিমের পাশাপাশি চীনের প্রতিবেশী ভারত, ভিয়েতনাম কিংবা তাইওয়ানও কৌশলগত নীতির কারণে চীনা সামরিক সরঞ্জামের ব্যবহার করে না, যে কারণে এসব দেশে এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিষিদ্ধ না হলেও বাস্তবে এর ব্যবহার নেই।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চীনা সামরিক যন্ত্রে সম্ভাব্য নজরদারি ও তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এসব বিমান ব্যবহার থেকে বিরত থাকে।
কোন কোন দেশ ব্যবহার করে?
যুদ্ধবিমান ও বিমানের যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন এবং উৎপাদানকারী চীনা কোম্পানি চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের (সিএসি) তৈরি এফ-৭ বিজিআই মূলত বহুমুখী অভিযান ও উন্নত প্রশিক্ষণে সক্ষম একটি হালকা যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী বিশেষভাবে এই বিমান তৈরি করে চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন।
চীনের চেংদু জে-৭ যুদ্ধবিমানের সিরিজের উন্নত রপ্তানি সংস্করণ এফ-৭। ১৯৬৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই বিমান তৈরি করেছিল সিএসি। ২০১৩ সালে চীন ১৬টি এফ-৭ বিমান বাংলাদেশে রপ্তানি করে। সেটিই ছিল এই বিমানের শেষ চালান। এরপর থেকে চীন এফ-৭ বিমানের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান, মিয়ানমার, নামিবিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া এবং জিম্বাবুয়ের মতো কিছু দেশ এই বিমান ব্যবহার করছে। আধুনিক যুদ্ধবিমানের তুলনায় কম খরচ আর রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হওয়ায় তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশে এফ-৭ সিরিজের বিমান রয়েছে।
নিষিদ্ধ নয়, তবে অপ্রচলিত যেসব দেশে:
সামরিক বিমানের ক্ষেত্রে ‘নিষিদ্ধ’ বলতে সাধারণত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বা গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে সম্পূর্ণ ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া বোঝায়। চীনা এফ-৭ যুদ্ধবিমানের ব্যবহার কোনো দেশই সরাসরি নিষিদ্ধ করেনি। তবে বিশ্বের কিছু দেশ তাদের সামরিক বাহিনীর বহর থেকে এফ-৭ যুদ্ধবিমান সরিয়ে নিচ্ছে কিংবা নতুন বিমান দিয়ে প্রতিস্থাপন করছে।
চীনা এই বিমানের নকশা অনেক পুরোনো। আধুনিক যুদ্ধবিমানের মতো এই যুদ্ধবিমানে উন্নত রাডার, ডেটা লিঙ্ক, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম কিংবা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা নেই। এফ-৭ যুদ্ধবিমান মূলত ‘পয়েন্ট ইন্টারসেপ্টর’ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ শত্রুপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধের সময় আকাশ প্রতিরক্ষা ও দ্রুত পাল্টা প্রতিক্রিয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় এই বিমান।
আপনার মতামত লিখুন :