যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে চলমান রুশ-যুদ্ধের অবসানের জন্য রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে একটি মুখোমুখি শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।
সোমবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে আমন্ত্রণ জানান। এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ আক্রমণের পর থেকে সংঘাত সমাধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা।
পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর ট্রাম্প জানান, শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন শুরু হয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় নেতাদের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। তিনি এটিকে প্রায় চার বছর ধরে চলমান যুদ্ধে একটি ‘প্রাথমিক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট নিশ্চিত করেছেন যে পুতিন দ্বিপাক্ষীয় বৈঠকে সম্মত হয়েছেন, যদিও কোন তারিখ বা স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। জেলেনস্কি বলেন, তিনি রাশিয়ান নেতার সঙ্গে একান্তে দেখা করতে ‘প্রস্তুত’।
রাশিয়ার রাষ্ট্রসংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিন এবং ট্রাম্প রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে ‘সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন’, যদিও মস্কো শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেয়নি।
হোয়াইট হাউসে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো হবে ‘প্রথম প্রতিরক্ষা রেখা’, তবে যুক্তরাষ্ট্রও ‘প্রচুর সাহায্য’ দেবে। জেলেনস্কি জানান, কিয়েভের অংশীদাররা আগামী ১০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যারান্টির বিস্তারিত ঘোষণা করবে।
ট্রাম্প ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ বাতিল করলেও, তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন যে পুতিন ৩২ সদস্যের ন্যাটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা নীতির মতো নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য উন্মুক্ত।
উত্তর আটলান্টিক চুক্তির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা হলে তা জোটের সকল সদস্যের বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়।
সোমবারের আলোচনার পর ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুট বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের অঙ্গীকার একটি ‘অগ্রগতি’, যদিও এই সম্পৃক্ততার সঠিক ধারা আগামী দিনে নির্ধারিত হবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, আলোচনায় মার্কিন বা ইউরোপীয় সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রুট বলেন, ‘আমরা সবাই একমত যে, যদি এই যুদ্ধ শেষ হয়, তবে তা অবশ্যই চূড়ান্ত হতে হবে।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউরোপীয় সৈন্য ছাড়া পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কনস্টান্টিন সোনিন বলেন, পুতিনের কাছে এই ধরনের নিরাপত্তা ‘অগ্রহণযোগ্য’, তাই ইউরোপীয় নেতাদের ট্রাম্পকে বোঝানো প্রয়োজন, যাতে যুদ্ধ বন্ধ হলেও ভবিষ্যতে পুনরায় শুরু না হয়।
সোনিন আরও বলেন, ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে লিখিত গ্যারান্টি দ্বারা রক্ষা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার আক্রমণ এবং ২০২২ সালের রাশিয়ার পূর্ণ আক্রমণের সময় আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে, যা মূল বিরোধের সূত্র।
সূত্র: আল-জাজিরা
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন