রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসার সম্ভাবনা তিনি কখনোই ‘বাতিল করেননি’ । তবে পুতিন সতর্ক করে দিয়ে এটাও বলেছেন, যদি কোনো শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে মস্কো নিজস্ব লক্ষ্য সামরিক উপায়ে অর্জন করবে।
আলোচিত চীন সফরের শেষ পর্যায়ে এসে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এ কথা বলেন। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখে পুতিন বলেন, ‘ডোনাল্ড (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) আমাকে এ ধরনের একটি বৈঠকের জন্য বলেছিলেন। আমি বলেছি, হ্যাঁ, এটা সম্ভব। জেলেনস্কিকে মস্কোয় আসতে দিন।’
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি সমঝোতার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধের বার্তা নিয়ে তিনি (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় পুতিন ও (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে একটি মুখোমুখি বৈঠকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যদিও ট্রাম্পের এমন প্রচেষ্টার এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে এর মধ্যে গত মঙ্গলবার জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠকে বসার জন্য সম্ভাব্য স্থান হতে পারে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা।
এদিকে ইউক্রেনে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন পুতিন। ভূখণ্ড নিয়ে যেসব প্রশ্ন সামনে এসেছে, সে জন্য ইউক্রেনে গণভোট আয়োজনের কথাও বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পুতিনের এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভ। রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে, শান্তিচুক্তি করতে হলে ২০২২ সালে যে চার অঞ্চল রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করে নিয়েছিল, সেগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মস্কোকে দিতে হবে। অন্যদিকে কিয়েভ বলছে, নিজেদের ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হয়, এমন কোনো চুক্তি ইউক্রেন সরকার করবে না।
পুতিনের হুমকি, কী বলছে কিয়েভ
সংবাদ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি বলেন, যদি বোধোদয় হয় ও সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলোর দেখা মেলে, তাহলে একটি চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনে চলা সংঘাতের অবসান ঘটানো যেতে পারে। তবে পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি সেটা না হয়, তাহলে সামরিক উপায়ে এর সমাধান করতে হবে।
পুতিনের এমন হুমকির জবাব দিতে গিয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, দুই নেতার মধ্যে (জেলেনস্কি ও পুতিন) একটি বৈঠক আয়োজনের জন্য সাত দেশের পক্ষ থেকে ‘আন্তরিক প্রস্তাব’ দেওয়া ছিল। সেই অনুযায়ী জেলেনস্কিও ‘যেকোনো সময়’ প্রস্তুত ছিলেন। তবু পুতিন জেনেশুনে অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব সামনে আনছেন বলে মন্তব্য আন্দ্রি সিবিহার। তার মতে, পুতিন আর একটা ঝামেলাপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে সবকিছু এগিয়ে নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে শুধু বাইরের চাপ রাশিয়াকে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সচেষ্ট হতে বাধ্য করতে পারে।
আবারও পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। সেই সঙ্গে ট্রাম্প এটাও বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে পুতিনের কাছে কোনো বার্তা নেই। কেননা তিনি জানেন, বিষয়টি নিয়ে আমার অবস্থান কোথায়। তিনি কোনো না কোনোভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাঁর (পুতিনের) সিদ্ধান্ত যেটাই হোক না কেন, হয় আমরা খুশি হব, নয়তো অসন্তুষ্ট হব। আর যদি আমরা খুশি হতে না পারি, তাহলে অনেক কিছু ঘটতে দেখবেন।’
আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন স্টিভ উইটকফ। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত। বুধবার উইটকফের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, তিনি (উইটকফ) রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন প্রশাসনের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার পুতিন বলেছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান শুনছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে চান জেলেনস্কিও
পুতিন যখন জেলেনস্কির সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেন, তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার প্রত্যাশা করছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন সফরকালে জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তারা একটি ‘ব্যাকস্টপ’ দিতে পারে। আর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বুধবার বলেন, ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) কিয়েভকে সমর্থন দিতে ‘ইচ্ছুকদের জোট’ এটি অনুমোদন করবে।
প্রস্তুতিমূলক কাজ ‘শেষ হয়েছে’ উল্লেখ করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যেদিন শান্তিচুক্তি সই হবে, সেদিন থেকে ইউরোপীয়রা ইউক্রেন ও দেশটির মানুষকে নিরাপত্তা নিশ্চিয়তা দিতে প্রস্তুত আছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন