সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:০০ পিএম

টিকটক ‘দখলে’ নিচ্ছে ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:০০ পিএম

ছবি- এআই দিয়ে তৈরি

ছবি- এআই দিয়ে তৈরি

মার্কিন কংগ্রেস ও প্রযুক্তি জগতের প্রভাবশালী মহল এক বছর আগেও অভিযোগ তুলেছিল, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক ইসরায়েল-বিরোধী বার্তা প্রচার চালাচ্ছে। এ কারণে তারা অ্যাপটি বন্ধ করারও পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু এবার চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানা থেকে মার্কিন বিনিয়োগে টিকটক কিনেই নিচ্ছেন পশ্চিমারা। আর এই বিনিয়োগের প্রধান অংশীদারদের বিরুদ্ধে উঠেছে দখলদার ইসরায়েলি সম্পৃক্ততার অভিযোগ।

বিশ্লেষণাত্মক ওয়েবসাইট রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফ্ট জানিয়েছে, টিকটক কেনার জন্য মার্কিন বিনিয়োগের প্রধান অংশীদারদের মধ্যে রয়েছেন ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন ও তার পরিবার। বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি ল্যারি এলিসন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি দাতা। ইতোমধ্যেই তিনি সংবাদ, টেলিভিশন ও হলিউড মিডিয়ায় সরাসরি অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছেন।

সম্প্রতি প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স কর্পোরেশন অধিগ্রহণের মাধ্যমে তার ছেলে ডেভিড এলিসন আমেরিকান সম্প্রচার টেলিভিশন সিবিএস-এর শীর্ষপদে বসেছেন। ডেভিড এলিসন ইসরায়েলপন্থী সাংবাদিক নিয়োগ ও মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। অন্যদিকে, ল্যারি এলিসনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এল্ডার এলিসন এক্স ও টেসলারও প্রধান অংশীদার।

সংবাদমাধ্যমের সমালোচক ও ‘ইসরায়েল-বিরোধী পক্ষপাত’ নিয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া নিউজকর্প (ফক্স নিউজ)-এর প্রধান রুপার্ট মারডক ২০২৪ সালে বলেছিলেন, ইসরায়েলই ‘পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সভ্যতার সামনের সারিতে একা দাঁড়িয়ে আছে।’

এ ছাড়া, ওরাকলের প্রধান নির্বাহী ইসরায়েলি-আমেরিকান সাফ্রা ক্যাটজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থন জানাতে এবং সেখানে ওরাকলের অংশীদারিত্ব ধরে রাখতে নিয়মিত সফর করেছেন। গত জুলাইয়ে ইসরায়েলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলি স্বাধীনতার পক্ষে, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে। বিশ্বের সেরা মানুষরা এখানে আছেন এবং বড় বিজয়ীরা ইসরায়েলেই থাকবেন।’

এই বিনিয়োগ চুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন বিলিয়নিয়ার জেফ ইয়াসও। তিনি রিপাবলিকানদের অন্যতম শীর্ষ দাতা ও ইসরায়েলপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এসব সংগঠনের তহবিল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এআইপিএসি বা এআইপ্যাক) সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তাদের কার্যক্রম মুসলিম-বিরোধী এবং ইরানের সঙ্গে মার্কিন সংঘাতকে উৎসাহিত করে।

রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফ্ট জানায়, এই সকল ব্যক্তিরা ১৪ বিলিয়ন ডলারে টিকটক কেনার চুক্তির অংশ। ট্রাম্প বলেছেন, বেসরকারি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ তালিকা কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, এলিসনের ওরাকল, প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম সিলভার লেক এবং আবুধাবি সরকারের প্রতিষ্ঠিত এআই-কেন্দ্রিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এমজিএক্স নতুন টিকটকে ৪০ শতাংশ শেয়ার পাবে। এর মধ্যে ওরাকল এককভাবে ১৫ শতাংশ শেয়ার রাখবে এবং অ্যাপটির ‘নিরাপত্তা প্রদানকারী’ হিসেবে নামকরণ হবে।

কিছু পর্যবেক্ষক এই চুক্তিকে ‘অগ্নি বেচা’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ ২০২২ সালে ইলন মাস্ক টুইটার (বর্তমান এক্স) কিনতে এর তিনগুণ অর্থ খরচ করেছিলেন। তাদের মতে, এটি কেবল অর্থনৈতিক লেনদেন নয়, বরং ভূ-রাজনীতি ও মতাদর্শের গভীর প্রভাব এতে কাজ করছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট ফক্স নিউজকে জানান, টিকটকের সাত সদস্যের বোর্ডের ছয়জনই আমেরিকান হবেন। অন্যদিকে, সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, প্রযুক্তি ও মিডিয়া জায়ান্ট ল্যারি এলিসন, মাইকেল ডেল, ল্যাচলান ও রুপার্ট মারডক এই গ্রুপে থাকবেন এবং টিকটকের অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ নেবেন। তারা টিকটকের মার্কিন কার্যক্রমও অধিগ্রহণ করবেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলিসন ও তার সহযোগীরা বহুদিন ধরেই টিকটক কেনার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। এক বছর আগেও তারা অ্যাপটিকে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কারণ এতে ‘ফিলিস্তিনিপন্থি’ কনটেন্ট ছড়াচ্ছিল। এখন মালিকানা বদলের ফলে তারা সরাসরি ব্যবহারকারীর ডেটা এবং প্রদর্শিত সংবাদ ও বার্তায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।

২০২৪ সালের এপ্রিলে কংগ্রেসে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, টিকটকের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রে চালু রাখতে হলে অ্যাপটির কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শেয়ার মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হতো।

পিউ রিসার্চ জানায়, টিকটকের প্রায় ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই তরুণ। ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই তরুণ ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ আগের তুলনায় রিপাবলিকান প্রার্থীকে বেশি সমর্থন দিয়েছে।

বর্তমানে টিকটকের বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারী ১.৫ বিলিয়নেরও বেশি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশই মার্কিন নাগরিক। নতুন বিনিয়োগ চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকান কোম্পানিগুলো শুধু ব্যবহারকারীর ডেটায় অ্যাক্সেস পাবেই না, বরং অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণ করে সংবাদ, বার্তা ও ভিজ্যুয়াল কনটেন্টেও প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।

ডিজিটাল গভর্নেন্স বিশেষজ্ঞ জর্জিয়া টেকের অধ্যাপক মিল্টন মুলার এই লেনদেনকে ‘ন্যায্য বাজার চুক্তি নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে নির্ধারিত পুনর্গঠন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, রিপাবলিকান ও মাগা সমর্থকদের অংশগ্রহণের কারণে এটি এক নতুন ‘ট্রাম্প-বান্ধব মেগাফোন’ তৈরি করছে। তবে প্রকৃত প্রভাব আরও গভীর; সাফ্রা ক্যাটজের ভাষায়, ‘বড় বিজয়ীরা ইসরায়েলেই থাকবেন’।

Link copied!