মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা ‘শান্তি’ পরিকল্পনা নিয়ে মিসরে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা। মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে সোমবার (৬ অক্টোবর) শুরু হওয়া ওই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা করছেন। দ্রুত শান্তিচুক্তি করতে উভয় পক্ষকেই চাপ দেওয়া হচ্ছে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে।
মিসরের শুরু হওয়া পরোক্ষ আলোচনা দ্বিতীয় দিনের মতো চলবে মঙ্গলবারও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে ইসরায়েল। হামাসও কিছু প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তবু বেশ কয়েকটি বড় অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে।
প্রথম দিনের বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয় (বন্দি বিনিময়, যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ) নিয়ে আলোচনা হয়। হামাসের প্রতিনিধিরা মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছেন, ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলা বন্দি বিনিময় আলোচনাকে কঠিন করে তুলছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংস্থার প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল-হাইয়া ও জাহের জাবারিন। গত মাসে দোহায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া এই দুই নেতা আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করতে চান, যাতে তাঁর পুরো শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে গতি আসে।’ তিনি আরও জানান, ‘আমাদের টিম এখনই কাজ করছে যেন বন্দিদের মুক্তির জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি হয়। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের তালিকা যাচাই চলছে।’
এ ছাড়া সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একটি ভালো চুক্তির কাছাকাছি আছি। হামাস এখন এমন কিছু বিষয়ে সম্মত হচ্ছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তবে তিনি এটাও জানান, তাঁরও কিছু ‘রেড লাইন’ আছে, যা তিনি মানবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত হিসেবে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা স্টিভ উইটকফ। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ট্রাম্পকন্যা ইভানকার স্বামী জ্যারেড কুশনারও।
মিশরের সরকারি সংবাদমাধ্যম আল-কাহিরা নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার আলোচনার দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হবে। দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আজই দুই বছর পূর্ণ হলো হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের, যেখানে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছিলেন এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করা হয়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যামূলক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাব গাজা যুদ্ধের অবসানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি লেখেন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়া এই রক্তপাত বন্ধ করা সম্ভব নয়। এখনই শান্তির পথে এগোনোর সময়।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, মিশরে ইসরায়েল-হামাস আলোচনার প্রথম দিন শেষ হয়েছে আশাব্যঞ্জকভাবে। বন্দি বিনিময়, যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ এই তিন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তবে গাজায় রক্তপাত এখনো থামেনি, যা শান্তি প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এদের মধ্যে তিনজন মানবিক সহায়তা সংগ্রহে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন