মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তার মাকে প্রত্যর্পণের যে অনুরোধ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার করেছে, ভারত তা গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন না। বুধবার (১৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন জয়। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘ভারত সবসময়ই ভালো বন্ধু, আর এই সংকটের সময় ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। তাই আমার মায়ের জীবন রক্ষার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদির সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমাতে হত্যার আদেশ, উসকানি এবং তা বাস্তবায়নে সহযোগিতার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার চলে। সেই বিচারের রায়ে গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধী ওই আন্দোলনে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে’ মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সেদিন বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণে ভারতকে আবার চিঠি দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সেদিন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আবারও আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।’
অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকারের তরফে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ভারত আমলে নিয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ স্বার্থের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে দেশটির শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার বিষয় রয়েছে। সেদিক বিবেচনায় আমরা সব অংশীজনের সঙ্গে সর্বদা গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত হব।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে বড় ধরনের পরীক্ষায় ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের ভাষ্য। তবে জয় বলছেন, ‘আমি মনে করি (নয়াদিল্লি) খুব ভালোভাবেই জানে এই প্রত্যর্পণ অনুরোধ কীভাবে সামলাতে হয়। আমি মনে করি না ভারত সরকার এ ধরনের বেআইনি অনুরোধে সাড়া দেবে।’

