ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

গাজার ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’ কী, কারা থাকছে এতে?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভোটি। ছবি- সংগৃহীত

গাজায় সংঘাত বন্ধে ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সেই প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবে গাজাকে নিরাপদ করার জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) নামে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার নিরাপত্তায় সহায়তার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তার ওপর নজর রাখবে আইএসএফ । তবে তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, এই বাহিনী কাজ করবে ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে। তাদের লক্ষ্য গাজাকে অস্ত্রমুক্ত করা। একই সঙ্গে একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

আইএসএফ কী

আইএসএফ একটি বহুজাতিক বাহিনী। গাজায় পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সীমান্তের সুরক্ষা দেওয়া, উপত্যকাটিকে অস্ত্রমুক্ত করে নিরাপত্তা বজায় রাখা, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া, মানবিক কার্যক্রম চালানোসহ নানা দায়িত্ব পালন করবে তারা। এ ছাড়া সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে আন্তর্জাতিক এই বাহিনী।

গাজার নিরাপত্তাসংক্রান্ত অনেক দায়িত্বও নিজেদের হাতে তুলে নেবে আইএসএফ। ১৯ বছর ধরে এসব দায়িত্ব পালন করে আসছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ২০০৬ সাল থেকে গাজা শাসন করছে সংগঠনটি। উপত্যকাটির সামাজিক ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেবা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও রয়েছে তারা।

কাদের নিয়ে গঠন হবে এই বাহিনী

বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, এই বাহিনী মিসর ও ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করবে। সঙ্গে থাকবে নতুন প্রশিক্ষণ পাওয়া একটি পুলিশ বাহিনীও। ট্রাম্পের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বলেছেন, এই বাহিনীতে সেনা পাঠাতে চেয়েছে আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া।

ওই উপদেষ্টার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আইএসএফে যোগ দেওয়ার জন্য মিসর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও আরব আমিরাতের সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার গারগাশ সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেছেন, এই বাহিনীতে তাঁর দেশ অংশ নেবে না। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, বাহিনীটির নেতৃত্ব দিতে পারে মিসর।

এ ছাড়া গত অক্টোবরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছিলেন, গাজায় সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে তাঁর দেশ। পরে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তখন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেয়ন সার বলেছিলেন, গাজার ভূখণ্ডে তুরস্কের সেনাসদস্যদের উপস্থিতি মেনে নেবে না তাঁর দেশ।

যেভাবে ভোট হলো

নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের প্রস্তাব ১৩-০ ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। রাশিয়া ও চীন ভোট দেয়নি। আইএসএফে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্বে ঘাটতি রয়েছে এবং গাজার ভবিষ্যতে জাতিসংঘের স্পষ্ট ভূমিকা উল্লেখ না থাকায় এই প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মস্কো ও বেইজিং।

এর আগে গাজা নিয়ে নিজস্ব একটি প্রস্তাব দিয়েছিল রাশিয়া। ওই প্রস্তাবে বাহিনীতে কারা অংশ নেবে, তা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবকে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল মস্কো। তবে তাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের মতো গাজায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের কথা বলা হয়নি।

হামাস কী বলছে

হামাস ট্রাম্পের এই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদে এই ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকার ওপর একটি ‘ভিনদেশি অভিভাকত্ব’ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা গাজা শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তাদের অস্ত্রহীনও করা হবে। তাদের দুটি বিকল্পের যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে, গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সহাবস্থান অথবা নিরাপদে উপত্যকাটি ছেড়ে যাওয়া। হামাস যদিও গাজা শাসন ছাড়তে রাজি, তবে অস্ত্র ছাড়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।

কী বলছে তেল আবিব

হামাসকে অস্ত্রমুক্ত করার দিকে নজর দিচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ তাঁর দেশ। তবে এ প্রস্তাব ঘিরে ইসরায়েলের অন্তত একটি দল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের সমালোচনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের অনুমোদন নিয়ে ইসরায়েল বেইতেনু পার্টির প্রধান এবং কট্টর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক আভিগদোর লিবারম্যান এক্সে লিখেছেন, ‘জাতিসংঘে যা ঘটেছে, তা ইসরায়েল সরকারের ব্যর্থতার একটি ফল। এর জেরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হবে, সৌদি আরবে পরমাণু প্রকল্প চালু হবে এবং তুরস্ক ও সৌদি আরব এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে।’