পূজা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ভারতের এক খ্রিস্টান সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে সেনাবাহিনী। এরপর দিল্লির আদালত তার এ শাস্তি বহাল রাখলে এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হন ওই কর্মকর্তা। তবে সামরিক বাহিনীর ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায়’ তার শাস্তি বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টও।
সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বুধবার (২৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আদালত তার রায়ে বলেছেন, নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এ কর্মকর্তা তার নিজ সেনাদের অপমান করেছেন।
প্রধান বিচারপতি সুরিয়া কান্ত ওই কর্মকর্তাকে বলেন, ‘নেতাকে উদাহরণসহ নেতৃত্ব দিতে হবে। আপনি আপনার সেনাদের অপমান করেছেন। আপনার ধর্মীয় নেতা, একজন যাজক যখন আপনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, আপনি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য চাইলে এটি (পূজা) করতে পারবেন। তখন আপনার সেটাই মেনে নেওয়া উচিত ছিল। আপনি অবাধ্য ছিলেন… সামরিক বাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায়, আপনি আপনার ধর্ম কী অনুমোদন করে, সে সম্পর্কে নিজস্ব ব্যক্তিগত ধারণা পোষণ করতে পারেন না।’
ওই সেনা কর্মকর্তার নাম লেফটেনেন্ট স্যামুয়েল কামালাসেন। প্রধান বিচারপতি স্যামুয়েলকে আরও বলেন, ‘রেজিমেন্টের ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করাকে শৃঙ্খলার চরমতম লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়।’
ভারতের প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আপনার হয়ত ১০০ বিষয়ে দক্ষতা আছে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী তার ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত। আপনি আপনার নিজ সেনাদের ধর্মীয় আবেগকে সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
মৌলিক অধিকার
লেফটেনেন্ট স্যামুয়েল কামালাসেনের পিটিশনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে দুই সদস্যের বেঞ্চ গঠিত হয়। এতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি। তিনি স্যামুয়েলের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, খ্রিস্টান ধর্মের কোন বিষয়টি তাকে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে?
তখন স্যামুয়েলের আইনজীবী শঙ্কর নারায়ণ বলেন, শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন বলে সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্মীয় বিধান পালনের অধিকার তার ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া যায় না।
জবাবে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, ‘সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদ ধর্মের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে সুরক্ষা দেয়, এর প্রতিটি অনুভূতিকে নয়।’
সেনাবাহিনীর পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বরিয়া ভাটি আদালতকে জানান, উচ্চপদস্থদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও লেফটেনেন্ট স্যামুয়েল রেজিমেন্টের ধর্মীয় প্যারেডে অংশ নেননি। যা তার ইউনিটের সংহতিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
এদিকে গত মে মাসে দিল্লির আদালত লেফটেনেন্ট স্যামুয়েলকে সেনাবাহিনীর দেওয়া শাস্তি বহাল রেখে রায় দেন। ওই সময় দিল্লির আদালত বলেন, ‘তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি বৈধ আদেশের ওপর নিজের ধর্মকে স্থান দিয়েছিলেন। যা স্পষ্টতই শঙ্খলার চরম লঙ্ঘন।’



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন