দীর্ঘ চার দশক পর সরাসরি আলোচনার টেবিলে বসেছে লেবানন ও ইসরায়েল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটির এই বৈঠক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বৈরুত বলছে, এটি শান্তি আলোচনা নয়, বরং শত্রুতা কমানো ও লেবানিজ ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের সেনাদের প্রত্যাহার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এ সব তথ্য জানা যায়।
বুধবার লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুর বাইরেও আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত বৈরুত। তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, এটি কোনও শান্তি আলোচনা নয় এবং ‘শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গেই যুক্ত’। সালাম জানান, আলোচনার লক্ষ্য শুধু ‘শত্রুতা বন্ধ করা, ‘লেবাননের বন্দিদের মুক্তি’ এবং লেবাননের ভূখণ্ড থেকে ‘ইসরায়েলের সেনাদের পূর্ণ প্রত্যাহার’ নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, লেবানন ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ আছে। সেই উদ্যোগে ইসরায়েলের ১৯৬৭ সালে দখল করা ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ সরে দাঁড়ানোর বিনিময়ে পরিস্থিতি পূর্ণ স্বাভাবিকীকরণের প্রস্তাব আছে। লেবানন কোনও পৃথক শান্তি চুক্তি করতে চায় না।
সালাম বলেন, বৈঠকে বেসামরিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ উত্তেজনা কমাতে সহায়ক হতে পারে। সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় পরিস্থিতি কতটা জটিল হচ্ছে তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সীমান্তরেখা ব্লু লাইন এলাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করে কমিটি। বৈঠক শেষে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বেসামরিক প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি ‘দীর্ঘস্থায়ী বেসামরিক ও সামরিক সংলাপের ভিত্তি গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’। এভাবে সীমান্ত এলাকায় ‘শান্তির পরিবেশ’ গড়ে তোলার আশাও প্রকাশ করে কমিটি।
গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষকেই কমিটির কাজের পরিধি ২০২৪ সালের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের বাইরে বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছিল। গত মাসে বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় নতুন করে বড় ধরনের উত্তেজনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতেই সর্বশেষ এই বৈঠকটি হলো।
যদিও ইসরায়েল নিয়মিত লেবাননে বিমান হামলা চালাচ্ছে। তাদের দাবি, হিজবুল্লাহ সদস্য ও স্থাপনাকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী লেবানিজ ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি সরে যাওয়ার কথা থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলীয় পাঁচটি এলাকায় তারা এখনো সেনা মোতায়েন রেখেছে।
এদিকে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদরোশিয়ান বুধবার সাংবাদিকদের অনলাইন ব্রিফিংয়ে লেবাননের সঙ্গে এই বৈঠকটিকে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও লেবাননের সরাসরি এই বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার ফল। প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এখন বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে রয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চাইছে সংগঠনটি অস্ত্র ত্যাগ করুক, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রেক্ষিতে পাল্টা তাদের ইসরায়েলবিরোধী আক্রমণের পর। তবে হিজবুল্লাহ এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, এটি আসলে লেবাননকে দুর্বল করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা। গত সপ্তাহে দলের নেতা নাইম কাসেম অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি হামলা থেকে দক্ষিণ লেবাননকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র।
কাসেম আরও বলেন, দলের সামরিক প্রধানকে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় হত্যা করা হয়েছে এবং এটির জবাব দেওয়ার অধিকার তাদের আছে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনাকে ‘ফাঁদ’ হিসেবেও বর্ণনা করেছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলছেন, হিজবুল্লাহকে অস্ত্র ছাড়তেই হবে, এটি রাষ্ট্র নির্মাণের অপরিহার্য উপাদান। এই সংগঠনের অস্ত্র ‘ইসরায়েলকে ঠেকাতে পারেনি, লেবাননকেও রক্ষা করতে পারেনি’। লেবানন আর এমন কোনও উসকানিতে জড়াবে না যা দেশে নতুন যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে। গাজার বিষয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিখতে হবে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন