পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির টিম্বাকতু শহরের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ফেরত আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক দশকেরও বেশি আগে আল-কায়েদা-সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করতে এগুলো রাজধানী বামাকোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। খবর দ্য গার্ডিয়ান
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১২ সালে জঙ্গিরা মরুভূমির এই শহর দখল করে ৪ হাজারেরও বেশি পাণ্ডুলিপি ও নয়টি সমাধি ধ্বংস করেছিল। তখন রাষ্ট্র পরিচালিত আহমেদ বাবা ইনস্টিটিউটের কর্মীরা চালের বস্তায় লুকিয়ে গাধার গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে অবশিষ্ট নথিপত্র পাচার করে শহর থেকে সরিয়ে আনেন।
বামাকোর আর্দ্রতা এসব নথির জন্য হুমকি তৈরি করায় মালির সামরিক জান্তা সোমবার থেকে সেগুলো ফেরত দেওয়া শুরু করেছে। প্রথম চালানে ২০০টিরও বেশি ক্রেট ফেরত আনা হয়েছে, যার ওজন প্রায় ৫ দশমিক ৫ টন।
মালির উচ্চশিক্ষামন্ত্রী বোরেমা কানসায়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ফেরত আসার অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এখন আমাদের দায়িত্ব এগুলোকে রক্ষা, ডিজিটালাইজেশন, গবেষণা ও প্রচার করা, যাতে এগুলো মালি, আফ্রিকা ও বিশ্বকে আলোকিত করে।’
পাণ্ডুলিপি ফেরতের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা স্থানীয় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। টিম্বাকতুর ডেপুটি মেয়র দিয়াহারা তোরে বলেন, এসব নথি ‘আমাদের সভ্যতা, আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন।’
তবে সাধারণ মালিয়ানদের মধ্যে উৎসাহ সীমিত। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব থাকলেও তারা বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার মতো বাস্তব সমস্যায় বেশি মনোযোগী।
এদিকে টিম্বাকতুর শহরটি মালির সেনাবাহিনী ও তাদের রাশিয়ান ভাড়াটে মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় জঙ্গিদের দখল বজায় রয়েছে। তারা নিয়মিত হিট-অ্যান্ড-রান হামলা চালিয়ে সরকারকে অস্থির রাখছে।
গত জুনে শহরের বিমানবন্দর ঘাঁটির কাছে এক গাড়ি বোমা হামলায় বিস্ফোরণ ও পরবর্তী বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ৩০ সেনা ও প্রায় এক ডজন হামলাকারী নিহত হয়।
হামলার আগে কর্তৃপক্ষ টিম্বাকতুতে কূটনীতিকদের আতিথেয়তা দিয়ে শহরের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের বার্তা দিতে চেয়েছিল। ডিসেম্বরে শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য একটি সাংস্কৃতিক বাইনালে আয়োজনের পরিকল্পনাও করছে জান্তা।
জার্মান থিঙ্কট্যাঙ্ক কনরাড অ্যাডেনাউয়ার ফাউন্ডেশনের সাহেল প্রোগ্রামের বামাকো-ভিত্তিক প্রধান উলফ লেসিং বলেন, সরকারের এসব উদ্যোগ আসলে স্থিতিশীলতার প্রদর্শন, যা মালির নিরাপত্তা উন্নত করার সক্ষমতাকে তুলে ধরতে চায়।
যদিও জঙ্গিরা মূলত সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করছে, আশঙ্কা রয়েছে টিম্বাকটুর প্রতীকী গুরুত্ব একে শেষ পর্যন্ত আরও আকর্ষণীয় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে।
পাণ্ডুলিপিগুলোকে সরাসরি লক্ষ্য করা হবে এমন সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। তবে শহরের যোগাযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর। জাতিসংঘ ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট সাপ্তাহিকভাবে চলাচল করে, কিন্তু জ্বালানি ঘাটতি যে কোনো সময় যাত্রীদের আটকে দিতে পারে।