সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল ফাশার শহরে ফজরের নামাজ চলাকালে একটি মসজিদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮৪ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এ হামলা চালায় বলে স্থানীয় চিকিৎসক ও সাহায্যকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
পশ্চিম দারফুরের এল ফাশারে এই হামলাটি ছিল সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা অবরোধকে আধাসামরিক বাহিনী আরও তীব্র করেছে, যেখানে হাজারো ক্ষুধার্ত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মসজিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে অন্তত ৮৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর নিকটবর্তী আল সৌদি হাসপাতালের একজন সিনিয়র চিকিৎসক সুলেমান ফোনে এ তথ্য জানান। এই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আল জামিয়া মসজিদ মুসল্লিতে পূর্ণ থাকাকালে হামলাটি হয়। ধ্বংসস্তূপ থেকে বহু রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকেই স্টিলের গার্ডারের নিচে আটকা পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘দৃশ্যটি ভয়াবহ এবং বর্ণনার বাইরে’।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক ওমর সেলিক। তিনি মাত্র গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এল ফাশারে আটকা পড়া প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার বেসামরিক মানুষের করুণ অবস্থার কথা জানিয়েছিলেন। বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়ানো এসব মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছিলেন। শুক্রবার সেলিকের মৃত্যুর বিষয়টি তার এক আত্মীয় এবং চিকিৎসক সুলেমান নিশ্চিত করেছেন।
সাক্ষাৎকারে ডা. সেলিক বলেছিলেন, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা উট ও গাধার জন্য তৈরি খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। শহরের অল্প কিছু স্যাটেলাইট সংযোগের একটির মাধ্যমে ভিডিও কলে কথা বলার সময় তিনি ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিজের খাবারও দেখিয়েছিলেন এক থালা কাদাযুক্ত পেস্ট। তিনি তখন হতাশ স্বরে বলেছিলেন, ‘এর বাইরে আর কিছু নেই’।
গত সোমবার টাইমসের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডা. সেলিক একটি টেক্সট বার্তায় জানান, তার বাড়ির চারপাশে আরএসএফের বোমা হামলা আরও তীব্র হয়েছে। তার বাড়ি সুদানের সেনাবাহিনী ও মিত্র যোদ্ধাদের একটি অবস্থান থেকে এক মাইলেরও কম দূরে। বার্তায় তিনি লিখেছিলেন, ‘এখন আমরা আবার আক্রমণের মুখে। আরও অনেক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।’
২০২৩ সালের এপ্রিলে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরএসএফ দারফুর অঞ্চলে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। উত্তর দারফুরের রাজধানী এল ফাশার তাদের জন্য কৌশলগতভাবে শেষ বড় বাধা। কয়েক মাস ধরে শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। খাবার ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং পালানোর চেষ্টা করা সাধারণ মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, শহরের চারপাশে আরএসএফ মাটির প্রাচীর তৈরি করেছে এবং চীনা তৈরি সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করছে। গবেষকদের দাবি, শহরের বড় অংশ ইতোমধ্যে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত আরএসএফকে কামান, চিকিৎসা সহায়তা এবং চীনা তৈরি ড্রোন সরবরাহ করেছে, যা এল ফাশারের অবরোধে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আমিরাত যুদ্ধে উভয় পক্ষকে সহায়তা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।