ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। শুক্রবারের (১৯ সেপ্টেম্বর) এই সিদ্ধান্তকে তেহরানের জন্য নতুন অর্থনৈতিক আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা রোধের প্রস্তাব চার-নয় ভোটে পাস হওয়ায়, বড় কোনো চুক্তি না হলে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়া নিষেধাজ্ঞা পুনঃপ্রবর্তনের বিরোধিতা করেছে। নিরাপত্তা পরিষদের নয়টি দেশ বিরোধী ভোট দিয়েছে, এবং দুটি দেশ ভোটে অংশ নেনি। এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি (ই৩) দ্বারা শুরু হওয়া ৩০ দিনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, যা আগস্টের শেষের দিকে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য তেহরানকে চ্যালেঞ্জ করে।
ইরানি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ইউরোপীয়রা ২০১৫ সালের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (জেসিপিওএ)-এর স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করছে। উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেছেন, ‘ইউরোপীয়রা যা করছে তা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, জেসিপিওএ-তে অন্তর্ভুক্ত প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করছে।’
ইরান যদি জাতিসংঘের পারমাণবিক পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার পুনরুদ্ধার করে ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়, তবে ইউরোপীয়রা নিষেধাজ্ঞা ছয় মাস পর্যন্ত স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, তেহরান একটি যুক্তিসঙ্গত ও কার্যকর পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে এবং দেশটি এনপিটির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে ই৩ দেশগুলো তেহরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। জেসিপিওএ-এর অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ করা, এবং জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ বোর্ডের জুনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সুরক্ষা নীতি মেনে চলছে না।
আল-জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেইস জানিয়েছেন, নিরাপত্তা পরিষদের ভোট চূড়ান্ত নয়। বিশ্বের নেতারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চ-স্তরের বৈঠকের জন্য নিউইয়র্কে উপস্থিত থাকায় ইরান ও তিন ইউরোপীয় দেশের মধ্যে উচ্চ-স্তরের কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়সূচি তৈরি করছে।
ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইইউ স্বাক্ষরিত জেসিপিওএ চুক্তি অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিনিময়ে তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে বের হয়ে একতরফা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করলে চুক্তি ভেঙে যায়। এ গ্রীষ্মে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ইসরায়েলি ও মার্কিন বাহিনী ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর।
ইরান বারবার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের কথা অস্বীকার করেছে, তবে দেশটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি অর্জনের অধিকার নিশ্চিত করেছে।