অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আল-জাজিরা।
২০২৪ সালের আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বের মধ্যে তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীপ্রধানের সঙ্গে ২০ মে একটি রুটিন বৈঠক করেন তিনি।
তখনই ছড়িয়ে পড়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের চিন্তা করছেন- এমন গুজবের। অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এ বৈঠককে। এমন পরিস্থিতি এখন ইউনূসের ভূমিকার ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
তবে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা (ইউনূস) আমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি পদত্যাগের কথা বলেননি এবং অন্যান্য উপদেষ্টাও আছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা আমরা পালন করছি।’
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এখনই সমস্যার সমাধান হয়নি।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। দীর্ঘমেয়াদে বেসামরিক দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনী ব্যস্ত থাকলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেন।
ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে এক উচ্চপর্যায়ের সমাবেশে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব, অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সম্ভব নয়।’
সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য, পুলিশের ভূমিকা পালনের জন্য নয়। নির্বাচনের পর আমাদের অবশ্যই ব্যারাকে ফিরতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও অন্তর্বর্তী সরকারের উত্তেজনা রয়েছে। গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দিক থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছে এটি। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায়। এ ক্ষেত্রে তারা অনড়।
অন্যদিকে, এ বছরের শুরুতে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও কয়েকটি দল বলছে, যেকোনো নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে ব্যাপক সংস্কার ও গত বছরের ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনায় জড়িত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিএনপি একটি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি জানায় যে, বছরের শেষের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। পাশাপাশি দুই ছাত্র উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া হয়।
শনিবার একটি বৈঠকের পর ঘোষণা করা হয় যে, ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করবেন না।
তবে ক্রমবর্ধমান এ অস্থিরতার মধ্যে ইউনূস হয়তো পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন- এমন গুজব আরও জোরালো হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার ইউনূস পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন এবং জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন- এ রকম গুজব সংবাদমাদ্যমে প্রচার হতে থাকে।
সেই সন্ধ্যায়, নাহিদ ইসলাম—যিনি জুলাই বিপ্লবের একজন ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে নতুন গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে দায়িত্বে থাকার জন্য অনুরোধ করেন।