ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

সীমান্ত নয়, সংকট এবার শব্দে: ফোনালাপে ফাঁসে নড়বড়ে থাই সরকার

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৩:৪৯ এএম
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। ছবি- সংগৃহীত

দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে ব্যক্তিগত এক ফোনালাপ এখন পরিণত হয়েছে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রে।

কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার কথোপকথন ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে একদিকে যেমন বাড়ছে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে অস্থিরতা, তেমনি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে থাইল্যান্ডের জোট সরকার।

ফোনালাপটি যেখানে সীমান্ত ইস্যুতে দুই নেতার ব্যক্তিগত আলাপ, সেখানে সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষ কমান্ডারকে নিয়ে পেতংতার্নের ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তোলে। হুন সেনকে ‘চাচা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, ‘সেই সেনা কমান্ডার শুধু কুল দেখাতে চায়, তার কথার কোনো দাম নেই।’ এই বক্তব্য থাই সামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অসম্মান হিসেবে দেখছে অনেকেই।

আর তার পরিণতিতে দেখা দেয় প্রথম বড় ধাক্কা, জোট সরকারের অন্যতম প্রধান শরিক দল ভুমজাইথাই পার্টি জোট ত্যাগ করে। সংসদে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রশ্নের মুখে। আরও দুটি দল আলাদাভাবে জোটে থাকা না-থাকার বিষয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে।

৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন, যিনি মাত্র ১০ মাস আগে দেশের ইতিহাসে কনিষ্ঠ ও দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসেছেন, এখন নিজেই রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মুখে।

অন্যদিকে, হুন সেন জানিয়েছেন যে ফোনালাপটি তিনি প্রায় ৮০ জন রাজনীতিবিদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন, এবং তাদের মধ্য থেকেই কেউ সেটি ফাঁস করেছেন। এরপর হুন সেন নিজেই পুরো ১৭ মিনিটের অডিও তার ফেসবুকে প্রকাশ করেন, যার ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়ে অসন্তোষ জানায় এবং বলেন, ‘এই ধরনের ফাঁস দুই দেশের মধ্যকার আস্থা ও কূটনৈতিক সৌজন্য নষ্ট করছে।’

বিশ্লেষকদের মতে, এই ফোনালাপ ফাঁস শুধু এক ব্যক্তিগত আলাপ নয়; এটি দুই দেশের বহু দশকের পুরোনো সীমান্ত বিরোধকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। মে মাসে সীমান্তে সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। তার জেরেই কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের পণ্য আমদানি ও সংস্কৃতি বিনিময় কার্যক্রম স্থগিত করে। নাটক-সিনেমা থেকে বিদ্যুৎ ও ফলমূল—সব ক্ষেত্রেই কূটনৈতিক প্রতিরোধ আরোপ করেছে।

পুরোনো ফরাসি ঔপনিবেশিক মানচিত্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই সীমান্ত বিরোধ শতবর্ষ পেরিয়ে আজও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কারণ। এবার সেই পুরোনো মানচিত্র নয়, বরং মোবাইল ফোনে রেকর্ড হওয়া কিছু বাক্যই নতুন করে জ্বালিয়ে দিয়েছে উত্তেজনার আগুন।

এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক চাপ সামলে পেতংতার্ন সরকার টিকে থাকতে পারে কি না, আর কূটনৈতিক দিক থেকে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সম্পর্ক কতটা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে পারে।