ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

যুদ্ধবিরতির পর ইরানে ব্যাপক ধরপাকড়

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একটি ম্যুরালের কাছে মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ইরান। বিশেষ করে অস্থির কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপক গ্রেপ্তার, মৃত্যুদণ্ড এবং সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নিরাপত্তা বাহিনী ও অধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স

গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েলের বিমান হামলা শুরুর পরপরই ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী চেকপয়েন্ট ও রাস্তায় টহল বাড়ানোর পাশাপাশি দেশজুড়ে ধরপাকড় শুরু করে।

ইসরায়েলের হামলাগুলোকে ঘিরে দেশটির কিছু নাগরিক ও নির্বাসিত বিরোধী দল আশা করেছিল যে এই ঘটনাগুলো হয়তো সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলনের সূচনা ঘটাতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যায়নি। তবুও, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে কুর্দি অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কায় সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

রেভল্যুশনারি গার্ড ও আধা-সামরিক বাহিনী বাসিজকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। দেশটির একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার ইসরায়েলি গোয়েন্দা এজেন্ট, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং নিষিদ্ধঘোষিত পিপলস মুজাহিদিন অর্গানাইজেশন নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা অতীতে ইরানের ভেতরে হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

২০২২ সালের বিক্ষোভে কারাবন্দি হওয়া এক অধিকারকর্মী রয়টার্সকে জানান, ‘সরকার এই যুদ্ধপরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এই আশঙ্কায় আমরা খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’

ওই কর্মী আরও বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এমন অনেক মানুষকে চেনেন যাদেরকে ডেকে পাঠিয়ে হয় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিংবা মত প্রকাশে সতর্ক করা হয়েছে।

ইরানি মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএএনএ জানায়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অভিযোগে ৭০০–এর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, তুরস্ক সীমান্তের কাছাকাছি উর্মিয়া শহরে তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেংগাও দাবি করেছে, তারা সবাই কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর সদস্য।

রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য দেয়নি।

সীমান্তে সেনা মোতায়েন, তল্লাশি জোরদার

নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পাকিস্তান, ইরাক ও আজারবাইজান সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কুর্দি ও বেলুচ, এই দুটি সুন্নি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের শাসনব্যবস্থার বিরোধিতা করে আসছে।

ইরাকি কুর্দিস্তানভিত্তিক তিনটি কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী জানিয়েছে, ইরানে তাদের সদস্য ও যোদ্ধাদের মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করছে।

ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইরানি কুর্দিস্তানের (কেডিপিআই) নেতা রিবাজ খলিলি বলেন, ইসরায়েলি হামলার তিন দিনের মধ্যে ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত স্কুলগুলোতে বিপ্লবী গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও অস্ত্র খুঁজতে।

তিনি আরও জানান, গার্ড সদস্যরা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিল্প এলাকা খালি করেছে, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, এবং কেরমানশাহ ও সানান্দাজ শহরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।

ফ্রি লাইফ পার্টি অফ কুর্দিস্তানের (পিজেএতে) সদস্য ফাতেমা আহমেদ জানান, বিমান হামলার পর কুর্দি প্রদেশগুলোতে তাদের হিসেবে অন্তত ৫০০ জন বিরোধী সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে, জানায় কুর্দি কমালা দলও। তারা বলেছে, এসব এলাকায় চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে, যেখানে মানুষের দেহ, মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র খুঁটিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এখন বাইরের হুমকি মোকাবেলার পাশাপাশি, সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দমনকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু কুর্দিদের নিয়ে সরকার বাড়তি সতর্ক।