ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ক্লাউডবার্স্ট কী, উপমহাদেশে এর ভয়াবহতা বেশি কেন?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। ছবি- সংগৃহীত

বর্ষা মৌসুমে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দেয়। চলতি সপ্তাহে একের পর এক ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে ভারতের শাসিত জম্মু-কাশ্মীর এবং পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ৩৫৪ জন নিহত হয়েছেন, ভারতের শাসিত অংশে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

আবহাওয়াবিদদের মতে, স্বল্প সময়ের অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতই ক্লাউডবার্স্ট। সাধারণত কোনো এলাকায় এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে তা ক্লাউডবার্স্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পাহাড়ি এলাকায় এটি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, কারণ পানির প্রবল স্রোত নিচে নেমে আসে এবং আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস, ঘরবাড়ি ধস ও সড়ক ধস সৃষ্টি করে।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় আবহাওয়াবিদ রুচিত কুলকার্নি বলেন, ‘ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ বিস্ফোরণ সাধারণত ৩০ বর্গকিলোমিটার বা তার কম এলাকায় ঘনীভূত হয়ে প্রতি ঘন্টায় ১০০ মিমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়। এটি বর্ষাকালে পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে আরব সাগর থেকে আসা আর্দ্র বায়ু প্রায়শই পাহাড় দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়, যা অরোগ্রাফিক লিফট নামে পরিচিত। ফলে বিশাল কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, যা বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা ধরে রাখতে পারে।

ক্লাউডবার্স্টের প্রক্রিয়া। ছবি- সংগৃহীত

কুলকার্নি ব্যাখ্যা করেন, ‘যখন আর্দ্র বায়ু প্রবাহের কারণে মেঘটি আরও ঘন ও ভারী হয়ে যায়, তখন এটি এক সময়ে ফেটে পড়ে এবং ক্লাউডবার্স্ট সৃষ্টি হয়।’

২০১৩ সালের জুনে ভারতের উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে ভয়াবহ ক্লাউডবার্স্ট ও বন্যায় প্রায় ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। কেদারনাথ বন্যা নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, সেসময় অর্ধেকের বেশি বৃষ্টি বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস ও অ্যারোসোল কণার বৃদ্ধির কারণে হয়েছিল।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতের উপমহাদেশে চরম বৃষ্টিপাতের ঘটনা বেড়েছে বলে গবেষকরা জানাচ্ছেন। এ ধরনের আবহাওয়াগত পরিবর্তন এবং ক্লাউডবার্স্ট ঝুঁকি উপমহাদেশে বর্ষাকালে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে, যা বিপুল প্রাণহানি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে।