মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত নতুন শুল্ক নীতির জেরে ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি হ্রাস পেয়েছে। আর সেই বাজারের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীন। বুধবার (২০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনা শোধনাগারগুলো অক্টোবর ও নভেম্বরে সরবরাহের জন্য অন্তত ১৫টি রাশিয়ান তেলের চালান নিশ্চিত করেছে। সাধারণত ভারত যেসব বন্দর থেকে রাশিয়ান তেল সরবরাহ পায়, সেখান থেকেই এবার তা চীনের উদ্দেশে রওনা হবে।
২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে ভারত ও চীন রাশিয়ান তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতায় পরিণত হয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপের হুমকি দেয় এবং রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রপ্তানির ওপরও সমপরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হয়। এর জেরে ভারত তার ক্রয় দ্রুত কমিয়ে দেয়।
পণ্য ও শিপিং ডেটা সংস্থা কেপলারের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মুয়ু জু জানান, গত সপ্তাহ পর্যন্ত চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বড় বেসরকারি রিফাইনারিগুলো অক্টোবর ডেলিভারির জন্য ১৩টি এবং নভেম্বরের জন্য অন্তত দুটি রাশিয়ান তেলবাহী জাহাজ বুক করেছে। প্রতিটি কার্গোর মধ্যে সাধারণত ৭ লাখ থেকে ১০ লাখ ব্যারেল তেল থাকে। এসব তেল রাশিয়ার আর্কটিক ও কৃষ্ণ সাগর বন্দর থেকে লোড হবে, যা দূরত্বের কারণে আগে মূলত ভারতের গন্তব্য হতো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কেনাকাটা মূলত দামভিত্তিক। বর্তমানে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প তেলের তুলনায় প্রতি ব্যারেল অন্তত ৩ ডলার সস্তা। মুয়ু জুর ভাষায়, এটি চীনের জন্য একটি ‘সুযোগসন্ধানী পদক্ষেপ’। তিনি আরও জানান, ভারতে ট্রাম্পের চাপ অব্যাহত থাকায় চীনা রিফাইনারিগুলো এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই আরও অর্ডার দিতে পারে।
শুক্রবার ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর জানান, চীনের রাশিয়ান তেল কেনার ওপর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করবেন না। তবে ‘দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে’ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, গত বছর ভারত রাশিয়া থেকে ৫৩ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল। জ্বালানি গবেষণা সংস্থা ভর্টেক্সার তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কাটছাঁটের আগে রাশিয়ান সরবরাহ ভারতের মোট অপরিশোধিত আমদানির ৩৬ শতাংশ জুড়ে ছিল, যা দেশটির জন্য রাশিয়াকে সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত করেছিল। অন্যদিকে, চীন একই সময়ে ৬২.৬ বিলিয়ন ডলারের রাশিয়ান তেল আমদানি করেছে, যা তাদের মোট আমদানির প্রায় ১৩.৫ শতাংশ।
তবে জু সতর্ক করেছেন, ভারতের ঘাটতি পুরোপুরি চীন পূরণ করতে পারবে না। ভারত প্রতিদিন প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ব্যারেল রাশিয়ান তেল কেনে, যেখানে চীন সমুদ্রপথে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১.২ মিলিয়ন ব্যারেল আমদানি করে। তার ভাষায়, ‘ভারত যদি দীর্ঘ সময় ক্রয় বন্ধ রাখে, তবে রাশিয়ার জন্য তা গুরুতর সমস্যা হবে। কারণ একা চীন ভারতের পুরো চাহিদা মেটাতে পারবে না।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন