ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

চীনের এক সিদ্ধান্তে ঘাম ঝরছে ট্রাম্পের

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ‘ফার্স্ট আমেরিকা’ নীতির প্রবর্তন ঘটান। বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে আরোপ করেন শুল্কও। ফলে চীনের সঙ্গে প্রকাশ্য বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা আবারও তীব্র রূপ নিচ্ছে।

এবার দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে এসেছে সয়াবিন বাণিজ্য। উভয় দেশ একে অপরের ওপর নতুন শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় বৈশ্বিক বাজারে বেড়েছে অনিশ্চয়তা, পণ্যের দামে পড়ছে তার সরাসরি প্রভাব।

চীন সম্প্রতি বিরল মাটির (রেয়ার আর্থ) উপাদান রপ্তানিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ১ নভেম্বর থেকে বেইজিংয়ের ওপর বর্তমান শুল্কের ওপরে ১০০ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার রপ্তানিতেও কড়া নিয়ন্ত্রণ আসছে।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ‘চীন ইচ্ছাকৃতভাবে আমেরিকান সয়াবিন কিনছে না।’

তবে বাস্তবতা হলো, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীন আমদানির উৎসে ভিন্নতা এনেছে, যাতে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান সয়াবিনের উচ্চ মূল্য এখন ক্রেতাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ডিসেম্বর-জানুয়ারির সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় বেইজিংকে শিগগিরই রাষ্ট্রীয় মজুদ ব্যবহার করতে হতে পারে, যা ইতোমধ্যে বৈশ্বিক বাজারে প্রভাব ফেলছে।

চলতি বছরে সয়াবিনের দাম ওঠানামা করেছে। ২০২৫ সালের শুরুতে প্রতি বুশেল ১০.১০ মার্কিন ডলার থেকে নামতে নামতে ৯.৭০ ডলারে পৌঁছায়, পরে তা স্থিতিশীল হয় প্রায় ১০.৮২ ডলারে।

এশিয়ার বাজার বিশ্লেষক সাদি কায়মাজ আনাদোলুকে বলেন, ‘সয়াবিন ওয়াশিংটনে কেবল কৃষিপণ্য নয়, রাজনৈতিক অস্ত্রও। মার্কিন কৃষকরা ট্রাম্পের নির্বাচনি ঘাঁটি, তাই দাম পড়ে গেলে তার রাজনৈতিক ক্ষতি হয়।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল বিশ্বে সয়াবিন রপ্তানির দুই প্রধান দেশ। অন্যদিকে চীন বিশাল পশুখাদ্য শিল্পের কারণে ব্যাপক আমদানি নির্ভর। মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বের পর বেইজিং ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকলেও, এখন সেখানকার মূল্য ও আবহাওয়া দুই-ই ঝুঁকিপূর্ণ।

কায়মাজ বলেন, ‘চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্ডার বন্ধ করায় শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে সয়াবিনের লেনদেন কমে গেছে। এতে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ, কারণ তিনি মনে করেন চীন ইচ্ছাকৃতভাবে শত্রুতা করছে। এমনকি তিনি চীন থেকে রান্নার তেল আমদানি বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন।’

এদিকে, কৃষকদের ওপর উচ্চ সুদের হার ও সারমূল্য বৃদ্ধির চাপ দ্বিগুণ। বিশ্লেষকদের ধারণা, বছর শেষের আগে চীনকে অন্তত এক কোটি টন সয়াবিন কিনতে হবে। কিন্তু ব্রাজিল থেকে প্রতি বুশেলের দাম পরিবহন ব্যয়সহ ৩ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে।

চীনের কৃষি বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গড়ে তোলা ৪৪ মিলিয়ন টন রাষ্ট্রীয় সয়াবিন মজুদ আপাতত ঘাটতি মেটানোর বাফার হিসেবে কাজ করতে পারে। কায়মাজ মনে করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে সয়াবিনের দাম আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘বছরের প্রথম নয় মাসে ব্রাজিল ১০২ মিলিয়ন টন সয়াবিন রপ্তানি করেছে, এটি নতুন রেকর্ড। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশই গেছে চীনে। চীনের বাজার এখন শুধু সয়াবিন নয়, পাল্প, কফি, ভুট্টা ও লৌহ আকরিকেরও সবচেয়ে বড় ক্রেতা।’

ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর, চীন ব্রাজিল থেকেই আরও বেশি আরাবিকা কফি বিন কেনা শুরু করেছে। অর্থাৎ, সয়াবিন থেকে কফি-যুদ্ধ এখন পণ্যের দুনিয়াতেও বিস্তৃত হচ্ছে। এমন অবস্থায় বিশ্ববাজার তাকিয়ে আছে দুই পরাশক্তির দিকে অর্থাৎ তাদের শুল্কযুদ্ধ থামবে, নাকি কৃষক আর ক্রেতার মাথায় আরও দামি ঝড় নামবে?