বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০৫:২০ পিএম

গোপনে ‘সুপার হিউম্যান’ তৈরি করছে চীন

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০৫:২০ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

মানুষের মস্তিষ্ক আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মিলিয়ে এবার ‘সুপার হিউম্যান’ তৈরির স্বপ্ন দেখছে চীন। আর দাবি করা হচ্ছে, শক্তির নিরিখে তা রোবটকেও ছাড়িয়ে যাবে। এই স্বপ্ন সত্যি হলে শিল্প-প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা সব ক্ষেত্রেই সক্ষমতার মানচিত্র বদলে যেতে পারে।

ড্রাগন দেশের ‘এআই মানব’ তৈরির এই সিদ্ধান্তে ঘুম উড়ে গেছে বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নয়াদিল্লির। সেইসঙ্গে প্রযুক্তি-নৈতিকতার প্রশ্নগুলোও এখন বেশ চর্চায়।

সম্প্রতি চীনের ‘সুপার হিউম্যান’ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন টাইম্‌স। এরপরই বিশ্বজুড়ে তোলপাড় পড়েছে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, বর্তমানে ‘ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ (বিসিআই) বা মস্তিষ্ক-কম্পিউটার সংমিশ্রণের গবেষণায় অনেকটা সাফল্য পেয়েছে বেইজিং। এর ওপরে ভিত্তি করে ‘এআই মানব’ গড়ে তোলার নীলনকশার ছক কষছেন বিজ্ঞানীরা।

‘এআই মানব’ প্রকৃতপক্ষে মানুষ এবং মেশিনের মিলিত রূপ। এর কাজ বা চিন্তা করার ক্ষমতা সাধারণ কোনও পুরুষ বা নারীর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এ ব্যাপারে সাফল্য এলে মানবসভ্যতার ইতিহাসকে যে চীন অন্য খাতে বইয়ে দেবে, তা বলাই বাহুল্য। আর তাই সংশ্লিষ্ট গবেষণার বিষয়টিকে বেইজিং যথাসম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে দ্য ওয়াশিংটন টাইমস।

সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, চীনের ‘সুপার হিউম্যান’-এর মস্তিষ্ক সরাসরি যুক্ত থাকবে কম্পিউটারের সঙ্গে। এরই পোশাকি নাম ‘ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ বা মস্তিষ্ক কম্পিউটার সংমিশ্রণ। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে এর সুবিধা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি কাল্পনিক চিত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, ‘এআই মানব’ কোনো ইমেল লেখার কথা ভাবলে সঙ্গে সঙ্গে তা ফুটে উঠবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে। ওই ব্যক্তিকে এ জন্য আলাদা করে কি-বোর্ডে একটি শব্দও টাইপ করতে হবে না।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, এমন কাল্পনিক চিন্তাভাবনার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হবে চীনের ‘সুপার হিউম্যান’। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে মুখ খুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি’ বিভাগ। তাদের দাবি, মোট তিন শ্রেণির ‘এআই মানব’ তৈরির চেষ্টা করছে বেইজিং। সেগুলো হলো, আক্রমণাত্মক, আধা-আক্রমণাত্মক এবং অনাক্রমণাত্মক।

ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন গবেষণা সংস্থাটির দাবি, ‘সুপার হিউম্যান’ তৈরি করতে হলে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সরাসরি গণনামূলক কোনো ডিভাইসে যুক্ত করতে হবে। এরপর টার্বোচার্জ প্রযুক্তির ব্যবহারে সেগুলোর সক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা যাবে। বর্তমানে চীনের বিজ্ঞানীরা সেই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক স্তর পেরিয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ‘এআই মানব’ তৈরির ক্ষেত্রে ঝুঁকিও রয়েছে ব্যাপক।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজ়ি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বেইজিং যেটা করছে তাতে হয় যন্ত্র মানুষের মতো আচরণ করবে, নয়তো মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য মুছে যাবে। তাদের গবেষণা সফল হলে মানব-মস্তিষ্ক এবং সার্কিট একসঙ্গে কাজ করবে। তখনই মুছে যাবে যন্ত্র ও মানুষের মধ্যেকার সীমারেখা।’ এই প্রক্রিয়ায় মানুষের মনের ওপর সরাসরি প্রযুক্তি প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে আরও বৃহৎ আকারে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে সমৃদ্ধ করতে এর ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল উন্নত করার দিকে নজর দিয়েছে ওপেনএআই বা মেটার মতো মার্কিন টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়ে উলটো মস্তিষ্ক অনুপ্রাণিত সিস্টেম গড়ে তোলার রাস্তায় ছুটেছে চীন। বেইজিংয়ের এই গবেষণা চিপ নির্মাণ বা ব্রুট-ফোর্স কম্পিউটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং এর মাধ্যমে বিকল্প একটি রাস্তার সন্ধান দিতে পারেন বিজ্ঞানীরা।

চীনের এই গবেষণার সবচেয়ে বড় সমর্থক হলেন তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডং মিং। গত সেপ্টেম্বরে বেইজিঙয়ের সরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এআই নিয়ে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘ভবিষ্যতে মানুষের পরিবর্তে এআই প্রযুক্তি কাজ করবে, এই ধারণা সঠিক নয়। বরং মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’

‘সুপার হিউম্যান’ তৈরি করার লক্ষ্যে ব্রেইন কম্পিউটারের গবেষণা খুব অল্প দিন ধরে যে চীন চালাচ্ছে, এমনটা নয়। ২০১৮ সালে ‘জ়েড অ্যাডভান্স কম্পিউটিং’ প্রযুক্তি তৈরি করে সরকারের নজরে আসেন বেইজিংয়ের দুই গবেষক সহদর বিজান ও সাইদ তাদায়ন। সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিতে ইমেজ বা ছবি চিহ্নিতকরণের জন্য মস্তিষ্ক অনুপ্রাণিত অ্যালগরিদম তৈরি করতে সক্ষম হন তারা, যা এআইয়ের দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছিল।

এরপরই তাদায়ন ভাইদের সংস্থার ২০ শতাংশ অংশীদার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় কমিউনিস্ট চীনের সরকার। পাশাপাশি, ‘এআই মানব’ প্রকল্পে কাজ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষে তিন কোটি ডলারের প্রস্তাব পান তারা। পরবর্তী সময়ে তাদায়ন ভাইদের তৈরি অ্যালগরিদমকে অন্যভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এ জন্য তৈরি করা হয় উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ‘গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট’ (জিপিইউ)। মানব-মস্তিষ্ক কীভাবে বিভিন্ন তথ্য বোঝে এবং তা শ্রেণিবদ্ধ রাখে, সেটাই বোঝার চেষ্টা রয়েছে তাদের।

এই গবেষণায় সবচেয়ে বড় বাধার জায়গাটি হলো মানব পরীক্ষা বা হিউম্যান ট্রায়াল। মানুষের দেহের অন্যতম জটিল অঙ্গ হলো মস্তিষ্ক। এর বহু কিছু এখনো চিকিৎসক বা গবেষকদের কাছে অজানা। ফলে হাউব্রিড মানব মডেল নির্মাণ কতটা বাস্তবের মুখ দেখবে, তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ।

দ্বিতীয় সমস্যার জায়গাটি হলো রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। ‘এআই মানুষ’-এর মস্তিষ্ক যুক্ত থাকবে কম্পিউটারের সঙ্গে। ফলে তার চিন্তাভাবনা পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা চলে যেতে পারে সরকারের মুষ্টিমেয় কয়েক জনের হাতে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে জনগণকে নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহারের সুযোগ পাবেন তারা। এর ‘কুফল’ যে সমাজের ওপরে দেখতে পাওয়া যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তৃতীয়ত, মানব-মস্তিষ্ক সুকুমার কাজের সঙ্গেও যুক্ত—আনন্দ বা বিষাদের সময় বিভিন্ন রকমের যে অনুভূতি সকলে ব্যক্ত করে থাকে, সেটাও আসে মস্তিষ্ক থেকেই। ‘সুপার হিউম্যান’-এর ক্ষেত্রে সেখানে যান্ত্রিকতা আসার আশঙ্কা থাকছে। ফলে সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে পারে হাসি, কান্না, ছবি আঁকা, গান বা অন্য যেকোনো সৃজনশীল শিল্পকীর্তি।

ছবি- সংগৃহীত

অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রাণী ও কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তির মিশ্রিত ব্যবহারের চেষ্টা রয়েছে জার্মানির। সেখানকার ‘সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স’ নামের স্টার্টআপ সংস্থা তৈরি করেছে বিশেষ ধরনের একটি ‘ব্যাকপ্যাক’। এটি বাঁধা হবে আরশোলা বা তেলাপোকার পিঠে। এরপর শত্রুর দেশে কায়দা করে ওই পতঙ্গগুলোকে ছেড়ে দিতে পারলেই সেখানকার গোপন খবর জোগাড় করা যাবে বলে দাবি করেছে ওই সংস্থা।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স’-এর তৈরি ওই ব্যাকপ্যাকে থাকছে সেন্সর, ক্যামেরা এবং নিউরাল স্টিমুলেটর। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বহুদূর থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ব্যাকপ্যাকটিতে কৃত্রিম মেধা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে তারা। গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ওই ব্যাকপ্যাকই তেলাপোকার পিঠে বাঁধা হবে বলে জানা গেছে।

তবে জার্মানি সাধারণ যেকোনো তেলাপোকাকে গুপ্তচরবৃত্তিতে নামাচ্ছে, তা ভাবলে ভুল হবে। এ জন্য পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার থেকে হিসিং প্রজাতির তেলাপোকা আমদানি করেছে বার্লিনের ওই স্টার্টআপ। ‘সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স’ জানিয়েছে, যেকোনো ধ্বংসস্তূপ, দেওয়াল বা সংকীর্ণ জায়গায় চলাফেরা করতে পারে তেলাপোকা। ফলে পতঙ্গটিকে ব্যবহার করে ‘রিয়্যাল টাইম ডেটা’ সংগ্রহ করা সম্ভব।

জার্মান সংস্থাটির দাবি, যুদ্ধক্ষেত্রে যেখানে ড্রোনে নজরদারি করা সম্ভব নয়, সেখানে তথ্য পাচারের কাজ করবে তেলাপোকার গোয়েন্দা বাহিনী। শত্রু ফৌজের গোপন আস্তানা খুঁজে বের করা বা বন্দিদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি দুর্দান্ত কাজ করবে। এ ছাড়া পতঙ্গগুলোর পাঠানো তথ্যের ওপরে ভিত্তি করে সন্ত্রাস দমন অভিযানও পরিচালনা করা যাবে বলে দাবি করেছে ওই সংস্থা।

Link copied!