বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তন, রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও জোটের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের ব্যয়বন্টন নিয়ে টানাপোড়েন- এসব প্রেক্ষাপটে অবশেষে প্রতিরক্ষা খাতে ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে পৌঁছাল ন্যাটো।
২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করবে এমন সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছে আমেরিকান নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটটির ৩২টি সদস্য দেশ।
বুধবার (২৫ জুন) নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই ঘোষণা আসে। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন সদ্য নির্বাচিত ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। শুরু থেকেই অনেকের কাছে এই লক্ষ্যকে অবাস্তব মনে হলেও, শেষপর্যন্ত তিনি সদস্যদের মধ্যে ঐক্যমত্য আনতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত মূল ব্যয়ের পাশাপাশি, বার্ষিক জিডিপির পাঁচ শতাংশ বিনিয়োগের ব্যাপারে মিত্র দেশগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধুমাত্র ব্যয়ের অঙ্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক নতুন কৌশলগত যুগে প্রবেশ করছে ন্যাটো; যেখানে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, রসদ সরবরাহ, প্রযুক্তি বিনিয়োগ, এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা পরিকল্পনা একসঙ্গে এগোবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, বর্তমানের তুলনায় ন্যাটোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।
ন্যাটো মহাসচিব রুটে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে এটা একদম পরিষ্কার যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর প্রতি, বিশেষ করে চুক্তির পঞ্চম অনুচ্ছেদ অনুসারে পারস্পরিক প্রতিরক্ষার নীতিতে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এই মন্তব্য তিনি করলেন এমন এক সময়ে, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি পঞ্চম অনুচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তির ভাষা অনেকটাই খোলামেলা, এবং তার নানা রকম ব্যাখ্যা হতে পারে।’
তবে রুটে স্পষ্ট করে জানান, ইউরোপীয় ও কানাডীয় মিত্রদের এখন সময় এসেছে নিজেদের নিরাপত্তার ভার আরও বেশি বহন করার। বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষায় যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করছে না, অথচ মার্কিন করদাতাদের অর্থেই মূল নিরাপত্তা কাঠামো চলছে।
এই প্রেক্ষাপটে ৫ শতাংশের এই লক্ষ্যমাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সেই দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। রাশিয়ার হুমকি, চীন-মধ্যপ্রাচ্য-মহাসাগরীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং সাইবার যুদ্ধের বাস্তবতায় এই সিদ্ধান্ত এখন কৌশলগত অপরিহার্যতা হয়ে উঠেছে।