বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইতালির এক আদালতের পক্ষে রায় দিয়েছেন ইউরোপীয় বিচার আদালত (ইসিজে)।
কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করলেই সেই দেশ থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় তাদের আটক বা ফেরত পাঠানো সহজ হয়।
ইইউ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ বিচারিক পর্যালোচনার সুযোগ থাকতে হবে এবং তার স্পষ্ট প্রমাণ দিতে হবে। বিশেষ করে, কোনো দেশে যদি নির্দিষ্ট ‘দুর্বল গোষ্ঠীর’ জন্য নিরাপত্তাহীনতা থাকে, তবে সেই দেশকে ‘নিরাপদ’ বলা যাবে না।
সংবাদমাধ্যম ইউরো নিউজের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের মামলার সূত্র ধরে শুরু বিতর্ক
এই মামলার সূত্রপাত হয় দুই বাংলাদেশি নাগরিকের মাধ্যমে, যাদের সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ইতালির কর্তৃপক্ষ আলবেনিয়ায় নির্মিত অফশোর প্রসেসিং সেন্টারে পাঠায়। সেখানে থেকেই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইতালিতে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন—তবে তারা যদি শুধু ‘নিরাপদ দেশ’ থেকে এসে থাকেন, তাহলে। আর ‘অনিরাপদ দেশ’ এসে থাকলে তাদের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইতালিতেই থাকার অধিকার রয়েছে।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ইতালি তাদের ‘নিরাপদ দেশ’ তালিকা হালনাগাদ করে বাংলাদেশ, মিশরসহ আরও কয়েকটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচকরা বলেন, এই দেশগুলোতে এখনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি হুমকি রয়ে গেছে, যা উপেক্ষা করা হয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘ইতালিতে আশ্রয়ের’ আবেদন বাতিল হলে তারা আপিল করেন, এবং ইতালির আদালত ‘নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত মানদণ্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিষয়টি ইইউ আদালতে পাঠান।
ইতালির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
ইতালির ডানপন্থি সরকার ও প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি রায়ের তীব্র সমালোচনা করে, ইইউ আদালত জাতীয় সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করছে এবং একক বিচারকদের মতামতকে সরকারের বিস্তারিত তদন্তের ওপরে স্থান দিচ্ছে।
ইতালি সরকার দাবি করে, এই রায় অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করবে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা দুর্বল করবে।
আলবেনিয়ায় বিতর্কিত কেন্দ্রে কার্যক্রম চলবে
রায় সত্ত্বেও, ইতালি এখনই আলবেনিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাঠানো বন্ধ করবে না। বরং, কর্তৃপক্ষ এখন সেই কেন্দ্রগুলোতে কেবলমাত্র তাদের রাখছে যাদের আবেদন ইতোমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এই রায়কে অনেকেই ইতালির বিচারকদের জন্য বিজয় হিসেবে দেখলেও সরকারে তাৎক্ষণিক নীতিতে বড় প্রভাব ফেলছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের ইইউ অভিবাসন নীতির পরিবর্তন
২০২৬ সালের জুন থেকে অথবা তার আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে নতুন একটি অভিবাসন নিয়ম চালু হতে পারে, যেখানে কিছু ব্যতিক্রম রেখে দেশগুলোকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করার সুযোগ থাকবে, যা ইতালির বর্তমান অবস্থানের সাথেই মিল রাখবে।
ইউরোপীয় কমিশনও একটি নিজস্ব ‘নিরাপদ দেশ’ তালিকা প্রস্তাব করেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও মিশরের নাম রয়েছে, যদিও সেটি বাধ্যতামূলক নয়।