বিতর্কিত ওয়াকফ শুনানিতে এবার নতুন আইনের পথে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জোরাল সওয়াল কেন্দ্রের। নরেন্দ্র মোদি সরকারের দাবি, ওয়াকফ আসলে একপ্রকার দান, এটা কোনোভাবেই ইসলামের অপরিহার্য অংশ নয়। তা ছাড়া মুসলিম ধর্মের অংশ হলেও আদতে ওয়াকফের ধারণার মধ্যে একটা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাপার আছে।
ওয়াকফ সংশোধনী আইন মুসলিম স্বার্থবিরোধী বলে অভিযোগ তুলে বড়সড় আন্দোলনের পথে হেঁটেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ। ভারতজুড়েই বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। নয়া ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার পানি গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও।
ইসলামিক সংগঠন তো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষেও একগুচ্ছ মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবারের পর বুধবারও (২১ মে) শীর্ষ আদালতে সেইসব মামলারই যৌথ শুনানি ছিল।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এদিন কেন্দ্রের হয়ে জোরালো সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা।
তিনি দাবি করেন, একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে, নতুন ওয়াকফ আইন চলে এলে মুসলিমদের সব সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। তা ছাড়া সরকারের কোনো সম্পত্তি যদি ওয়াকফ বোর্ড দখল করে নেয়, তাহলে সেটা কেন্দ্র ফেরত চাইতেই পারে। সেই অধিকার কেন্দ্রের আছে।
তুষার মেহেতার বলেন, ‘অতীতে সুপ্রিম কোর্টের রায়েই বলা হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ড দখল করলে সেটা পুনর্দখল করতে পারে সরকার। কেউ ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করছে মানেই সেই সম্পত্তিতে কারো মৌলিক অধিকার জন্মায় না।’
গতকাল মঙ্গলবার বিরোধীপক্ষের আইনজীবী কপিল সিব্বল প্রশ্ন তুলেছিলেন, ওয়াকফ কোনোভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ নয়। এটা আসলে ইসলামের অংশ। সরকার কেন জোর করে এটাকে ধর্মনিরপেক্ষ বানাতে চাইছে?
আজ পাল্টা সলিসিটর জেনারেল দাবি করলেন, ‘ওয়াকফের ধারণা ইসলাম ধর্মেরই। কিন্তু এটা ইসলামে অপরিহার্য নয়।’
তার ব্যাখ্যা, ‘ওয়াকফ সাধারণ দান ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের দান সব ধর্মেই আছে। খ্রিষ্টানদের মধ্যে আছে। হিন্দুদের মধ্যে আছে। শিখদের মধ্যেও আছে।’
এর আগে ৪ এপ্রিল দীর্ঘ বিতর্কের পর ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাস করা হয়। আগের দিন অনুষ্ঠিত ভোটে ২৮৮ জন এমপি বিলের পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট দেন ২৩২ জন।
এই নতুন ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪ মূলত ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের সংশোধনী। এর আগেও ২০১৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে বিলটি সংশোধন করা হয়েছিল, যা তখন বিনা বিতর্কে পাস হয়েছিল।
তবে এবারের সংশোধনী নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে কমপক্ষে দুজন অমুসলিম সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক। কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণা করতে হলে ওই ব্যক্তি কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্মাবলম্বী হতে হবে।