ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানীতে সরকার পরিচালিত পাটনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় ধর্ষণের শিকার ১০ বছর বয়সী এক দলিত মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার সকালে মেয়েটি হাসপাতালেই মারা যায়।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, শনিবার অ্যাম্বুলেন্সে প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো গিয়েছিল।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ভর্তি করাতে কোনো বিলম্ব হয়নি।
মেয়েটি গত ২৬ মে ধর্ষণের শিকার হয়। মোজাফফরপুরে মেয়েটির খালার বাড়ির কাছে বাস করা এক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে। বাড়ির বাইরে খেলার সময় মেয়েটি নিখোঁজ হয়।
পরে তার পরিবারের লোকজন রাস্তার ধারে তাকে পড়ে পায়। পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছে, মেয়েটির দেহে ছুরির কয়েকটি ক্ষত ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মেয়েটিকে মুজফ্ফরপুরের শ্রী কৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিত্সার জন্য পাটনা মেডিকেকলেজ ও হাসপাতালে (পিএমসিএইচ) নেওয়া হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে বেড পাওয়ার জন্য তাদেরকে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এরপর চিকিত্সা শুরু হলেও মেয়ের মৃত্যু হয়।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, চিকিৎসায় বিলম্ব হয়েছে বলে পরিবারের দাবি ভিত্তিহীন। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। জড়িত সব বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছিল এবং আইসিইউতেও মেয়েটির চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
তবে মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনা জাতীয় পর্যায়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো নিয়ে বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির এক সদস্যর হাসপাতাল স্টাফের সঙ্গে বচসা করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
এরপরই শিশুটির দুর্ভোগ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হতে থাকে। মেয়েটির মৃত্যুর পর থেকে বিরোধীদলগুলো বিহার রাজ্যে কয়েকটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখেন, ‘অত্যন্ত লজ্জাজনক বর্বরতা। যদি তাকে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া যেত, তাহলে বাঁচানো যেত। কিন্তু সরকার তার জীবন বাঁচাতে অবহেলা করেছে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা।’
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল এক্সে লেখে, ‘ধর্ষণের শিকার শিশুটি পাটনা হাসপাতালের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভর্তি হওয়ার অপেক্ষা করেছিল। হাসপাতালের নামে বড় বড় ভবন বানানোর কি মানে হয়? যখন চারিদিক বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ছেয়ে রয়েছে, অসভ্য আচরণ করা হচ্ছে আর সম্পদের অভাব ও অনুভূতির ঘাটতি রয়েছে।’
তবে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও জেডি(ইউ) দলের নেতারা অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিজেপি-এর মুখপাত্র অনামিকা সিং প্যাটেল শিশুটির মৃত্যুকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একটি হাসপাতাল চালাই। আমি জানি হাসপাতালে শয্যা পাওয়া সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। আমাদের সরকারের লোকেরা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছে।’
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনা ভারতে বিহার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিয়ে সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরবস্থাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা পরিকাঠামোর দুরবস্থার খবর দেশের গণমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে।
ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষরা সবচেয়ে নিগৃহীত। দলিতদের সুরক্ষায় ভারতে আইন থাকলেও তারা ব্যাপকভাবে খারাপ আচরণের শিকার হয়।
ধর্ষণের শিকার দলিত শিশুটির দুর্ভোগ ও মৃত্যুর ঘটনার সমালোচনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার ও মহিলা কমিশন। তারা এ ঘটনায় হাসপাতালের ভূমিকা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছে।