ঢাকা শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

মরদেহ ফিরে পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে স্বজনরা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০২:২৭ পিএম
মরদেহ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় কান্নায় ভেঙে পড়া স্বজনেরা । ছবি - সংগৃহীত

ভারতের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়া এআই১৭১ বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে মরদেহ উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে দেশটির বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। এখন হাসপাতাল থেকে নিহতদের লাশ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা।

উদ্ধারকাজ সমাপ্তি ঘোষণার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই বিমানে থাকা ২৪১ জন মারা গেছেন। একমাত্র জীবিত ব্যক্তিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি আসনে বসা বেঁচে যাওয়া তার ভাই জীবিত নেই বলেও নিশ্চিত করেছে বিবিসি।

এছাড়া যে মেডিকেল হোস্টেলের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়েছিল সেখানে পাঁচজন নিহতের খবর দিয়েছে ওই কলেজের অধ্যক্ষ।

তবে মোট হতাহতের সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষার পর নিহতের সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রাতভর অপেক্ষা করছেন স্বজন হারানো বহু মানুষ।

অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দুই কেবিন ক্রু ইরফানের বাবা ও সিঙসনের চাচাতো ভাইও।

ময়নাতদন্তের ঘরের সামনে ভিড়

আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতাল ঘটনাস্থল থেকে সবচেয়ে কাছে। এজন্য বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর উদ্ধার করে মরদেহ ও জীবিত যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।

ময়নাতদন্ত ঘরের সামনে বিবিসিকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে টি থাঙলিঙো হাওকিপ জানান, তার চাচাতো বোন সিঙসন ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১ এর বিমানবালা। তার খবর জানতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করছেন তিনি। তবে এখনও কোন খবর পাননি।

সিঙসনের সঙ্গেই ক্রু হিসাবে ওই বিমানে ছিলেন ইরফান। তার বাবা সামির শেখ জানান, তার ছেলে খুব বেশি ফোন করত না, কিন্তু প্রতিবার বিমান আকাশে ওড়ার আগে আর পৌঁছানোর পরে অবশ্যই ফোন করতেন। কিন্তু এদিন আর ফোন করেনি সে।

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হাসপাতাল চত্বরে রাতভর আত্মীয়-স্বজনরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে অপেক্ষা করেছেন। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, দেহ শনাক্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে, কারণ বিমানটি ভেঙ্গে পড়ার অভিঘাতটা এতই বড় ছিল যে অনেক শরীরই আর শনাক্ত করার মত অবস্থায় নেই।

নিহতদের তালিকায় ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও

ভেঙ্গে পড়া বিমানটির ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যেই ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিও। লন্ডন প্রবাসী মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তিনি। তার পুত্র শ্রমণ ও মেয়ে রাধিকা দুজনেই বিদেশে থাকেন। আরেক পুত্র পূজিত আগেই মারা গেছেন।

পেশায় স্টক মার্কেট ব্যবসায়ী রুপানি ২০১৬ সালের এমন একটা সময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছিলেন, যখন রাজ্যে বেশ অস্থিরতা চলছিল। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, রুপানির স্ত্রী আগেই তাদের মেয়ের কাছে লন্ডনে চলে গেছেন। রুপানি আলাদাভাবে যাচ্ছিলেন পরিবারের কাছে। স্ত্রীর সঙ্গে জুলাই মাসে ভারতে ফেরার টিকিটও কাটা ছিল বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ মহল।

পুরো পরিবারই শেষ

নিহতদের তালিকায় এমন একাধিক নাম রয়েছে, যারা সপরিবারে চেপেছিলেন ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিতে।

যুক্তরাজ্যের গ্লস্টা-র বাসিন্দা আকিল নানাবাওয়া, তার স্ত্রী হানা ভোরাজি তাদের চার বছরের কন্যা সারা নানাবাওয়া যেমন ছিলেন বিমানে, তেমনই আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনে যাচ্ছিলেন ৭২ বছরের আদাম তাজু এবং তার স্ত্রী হাসিনাও। সঙ্গে ছিলেন তাদের ৫১ বছর বয়সী জামাই আলতাফ হুসেন প্যাটেল। এরা তিনজনেই লন্ডনের বাসিন্দা ছিলেন।

বিমানটিতে চড়ার আগে আহেমদাবাদ বিমানবন্দর থেকেই ইনস্টাগ্রামে একটা ভিডিও পোস্ট করেছিলেন বিবাহিত দম্পতি ফিওঙ্গাল ও জেমি গ্রিনল-মিক। ওই ভিডিওতে তাদের হাসাহাসি করতে দেখা গিয়েছিল, ভারত ভ্রমণ নিয়ে দুজনে মজাও করছিলেন।

ভেঙে পড়া বিমানে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চেপেছিলেন পশ্চিম লন্ডনের বাসিন্দা জাভেদ সৈয়দ ও তার স্ত্রী মারিয়ম।এদের কেউই আর জীবিত নেই।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, নিহতদের আত্মীয়স্বজনকে ভারতে নিয়ে আসার জন্য তারা বিশেষ বিমান পাঠিয়েছে লন্ডনে।