ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদন,

মোদি সরকারের নয়া স্কুল সিলেবাসে দেশভাগের কালপ্রিট দাবি গান্ধী-নেহরুকে

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
পাঠ্যবইয়ে প্রকাশিত বিতর্কিত পৃষ্ঠা । ছবি- সংগৃহীত

দেশভাগের যন্ত্রণা নয়। বরং বিতর্ক এবং রাজনৈতিক স্বার্থই এবার পড়তে হবে স্কুলপড়ুয়াদের। সম্প্রতি ভারতের এনসিইআরটির পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দেশভাগ এবং সেখানে ‘কালপ্রিট’ হিসেবে সাফ দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে মহম্মদ আলি জিন্না এবং কংগ্রেসকে।

যেখানে ‘কংগ্রেস’ অর্থ- মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরু। তাঁরাই নাকি সেই দেশভাগের প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। ইতিহাস এবার এভাবেই পড়বে ভারতের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। মোদি সরকারের ইশারায় এই ‘বিশেষ পাঠ্যসূচি’ প্রকাশ হতেই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। সরব বিরোধীরাও।

তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর একদিকে যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে গেরুয়াকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার, তেমনই ভুল তথ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীদেরও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা পবন খেরার দাবি, ‘একটি তথ্যও সঠিক নয়। ওই বই জ্বালিয়ে দেওয়া উচিত। ইতিহাসে যদি কোনো খলনায়ক থাকে, তা আরএসএস। কংগ্রেস নয়। বরং মুসলিম লিগের সঙ্গে মিলে হিন্দু মহাসভা দেশভাগে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল। ইতিহাস বিকৃতির জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এদের ক্ষমা করবে না।’

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনেওয়ালার কটাক্ষ, ‘গেরুয়া শিবির কখনো সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায় না। বিজেপি পালিয়েও যায় না। দেশভাগের জন্য কংগ্রেসের সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার।’

এনসিইআরটির ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে বিভাজন বিভীষিকা দিবসসংক্রান্ত এহেন বিশেষ মডিউল তালিকাভুক্ত হয়েছে। সেখানেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে নেহরু, গান্ধীসহ কংগ্রেসের তৎকালীন নেতৃত্বকে। কী রয়েছে সেই মডিউলে? বলা হয়েছে, তিনটি ফ্যাক্টর দেশভাগ ঘটিয়েছিল।

প্রথম, মহম্মদ আলি জিন্নার বিভাজন-দাবি। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের তা সাদরে গ্রহণ করে গোটা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এবং তৃতীয়ত, ফ্যাক্টর, লর্ড মাউন্টব্যাটেন। এরই পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, কংগ্রেস আসলে জিন্নাকে সেভাবে গুরুত্বই দেয়নি। তার ফল হয়েছে মারাত্মক। এমনকি দেশভাগ ইস্যুতে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে, এর ফলে সুরক্ষার প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আমাদেরই এক প্রতিবেশী দেশ নানাভাবে চাপ তৈরি করছে।

মডিউলে উল্লেখ রয়েছে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবনারও। সেখানে জিন্না জানিয়েছিলেন, হিন্দু এবং মুসলিমের আদতে দুটো আলাদা বাসস্থান, ভিন্ন ভাব-দর্শন, পৃথক সামাজিক কাঠামো, সাহিত্য এবং বাসস্থান প্রয়োজন।

পাঠ্যসূচিতে থাকছে—মহাত্মা গান্ধী প্রথমে জানিয়েছিলেন তিনি কোনো পক্ষ হবেন না। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন তিনি নিজেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে দেশভাগের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। প্রস্তাব গ্রহণে সায়ও দিয়েছিলেন। পণ্ডিত নেহরুও এর পক্ষেই ছিলেন।

কংগ্রেসের অভিযোগ, বিশেষ পাঠ্যে বলা হয়েছে, লর্ড মাউন্টব্যাটেন প্রথমে ১৯৪৮ সালের জুন মাসে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে তা এক বছর এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অনেকেই জানতেন না, তাঁরা আদতে কোথায় আছেন। ভারতে? নাকি পাকিস্তানে?

র‌্যাডক্লিফ লাইনকে মানব-সৃষ্ট বেনজির ‘ট্র্যাজেডি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশভাগকে বলা হয়েছে, বিশ্বের ইতিহাসে এর মতো আর কোনো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেনি। এখানেই শেষ নয়। ইতিহাস বই থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন, মারাঠা সাম্রাজ্যের মতো একাধিক বিষয় বাদ দিয়েছে এনসিইআরটি। তাই চর্চা চলছে। নতুন ইতিহাস, আর তার নতুন উপস্থাপনা নিয়ে।