চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পৌঁছেছেন। তিন বছরের বেশি সময় পর সোমবার (১৮ আগস্ট) নয়াদিল্লি সফর এটি। এই সফরে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিন দিনের সফরে ওয়াং ই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী দুই দিনে দিল্লিতে ভারত-চীনের বিশেষ প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
চলতি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে তিনি আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি সাত বছর পর ভারতের চীনে প্রথম কোনো উচ্চস্তরের সরকারি সফর হবে।
বিশ্বের দুই সর্বাধিক জনবহুল দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে রয়েছে। ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর সম্পর্ক ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যে ছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক-যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে বেইজিং ও নয়াদিল্লি ধীরে ধীরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মেরামতের পথে এগোচ্ছে।
ওয়াং ইর এই সফরে হিমালয় সীমান্ত দিয়ে পুনরায় বাণিজ্য চালুর বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, প্রতীকী দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের সঙ্গে চীনের পাঁচ বছরের সীমান্ত টানাপোড়েনের পর গত বছরের অক্টোবরে সীমান্ত টহল সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও বিমান চলাচলের পথ পুনরায় খুলে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ভারত-আমেরিকার সম্পর্কের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীন-ভারতের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা ভারতের কৌশলগত অংশীদারদের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্কের একটি।
চীন ও ভারত ইতোমধ্যেই ২০২০ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশ হিমালয় সীমান্তের তিনটি জায়গায় বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়েও আলোচনা করছে।
যদিও দুই দেশের মোট ১২৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের তুলনায় সীমান্ত বাণিজ্য সামান্য, বিশেষজ্ঞরা এটিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
সূত্র: এএফবি
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন