ঢাকা সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

গাজার ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনা সদস্য। ছবি- সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মোট ভূখণ্ডের ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। রোববার (২৫ মে) এক বিবৃতিতে এ  তথ্য জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘এই নিয়ন্ত্রণ মূলত সরাসরি স্থল অভিযানের মাধ্যমে, বসতিপূর্ণ ও বেসামরিক এলাকায় দখলদার বাহিনী মোতায়েন করে এবং প্রবল গোলাবর্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ঘরবাড়ি, জমি ও সম্পত্তিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে চলছে অন্যায় জবরদস্তিমূলক উচ্ছেদ।’

মিডিয়া অফিস জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “গাজা উপত্যকার বিশাল অংশজুড়ে চলমান গণহত্যা, জাতিগত নিধন, ঔপনিবেশিক আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব ইসরায়েলি রাজনৈতিক অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে। তারা বলপ্রয়োগে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চাপিয়ে দিতে চায়, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

এদিকে গত কয়েকদিনে গাজায় ত্রাণের খুব সামান্য অংশই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা উপত্যকা জুড়ে মাসের পর মাস ধরে চলা ধ্বংসযজ্ঞ ও বোমাবর্ষণের ফলে সৃষ্ট বিশাল চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

তবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ অপসারণ ও জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতির প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে ইসরায়েলি হামলা এখন আরও তীব্র ও বর্বর রূপ ধারণ করেছে। দখলদার বাহিনী হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পরিবারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার পর, সরাসরি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংস হামলা চালাচ্ছে।

যেসব পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছে, তারা কোনো বিদ্রোহী মানসিকতা থেকে নয়, বরং একটি বাস্তব ও বেদনাদায়ক উপলব্ধি থেকেই থেকে গিয়েছিল—ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ আসলে নিরাপদ নয়। এসব এলাকাতেও একের পর এক বোমা বর্ষণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বহু নারী ও শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে।

সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েল নিরাপদ আশ্রয়ের কথা বললেও, বাস্তবে তারা মানুষকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ঠেলে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্ত করেছে।’

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই কৌশল শুধু মানবিক সংকটকেই বাড়িয়ে তুলছে না, বরং এটি যুদ্ধাপরাধেরও শামিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা এই দখলদারিত্বকে আরও বেপরোয়া করে তুলছে। গাজাবাসীরা বলছে, ‘আমরা ঘর ছাড়িনি, কারণ কোথাও নিরাপদ ছিল না। আমরা শুধু বেঁচে থাকার মরিয়া চেষ্টা করেছি।’

এই নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক অভিযানে গাজা আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি দিন মানেই বেঁচে থাকার জন্য এক নতুন লড়াই।