ইরান যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তেহরানের একজন কূটনীতিক। তিনি প্রস্তাবটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এতে তেহরানের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে এবং ইরানের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে ওয়াশিংটনের আগের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ওই কূটনীতিক বলেন, ‘ইরান একটি নেতিবাচক জবাব খসড়া করছে, যা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হিসেবেই ধরা যেতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবটি শনিবার (১ জুন) ইরানের হাতে তুলে দেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ বদর আলবুসাঈদী, যিনি ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তেহরানে এক স্বল্প সময়ের সফরে আসেন।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে পাঁচ দফা বৈঠকের পরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
সবচেয়ে বড় মতবিরোধ হলো যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করুক, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ খুলে দিতে পারে—এই যুক্তিতে। কিন্তু ইরান বরাবরই বলে আসছে, তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে চায় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
কূটনীতিক বলেন, ‘এই প্রস্তাবে ইরানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে, আর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়েও কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।’
তেহরান চায়, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা একবারে তুলে নিতে হবে, যা ইরানের তেলনির্ভর অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চায় ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে।
২০১৮ সাল থেকে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জাতীয় তেল কোম্পানিসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব সংস্থা সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান এবং অস্ত্র বিস্তার কর্মসূচিকে সহায়তা করে।
২০২৫ সালে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও ‘সর্বোচ্চ চাপের’ নীতি চালু করেছেন। এর আওতায় আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং চুক্তি না হলে ইরানকে সামরিকভাবে হামলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে, যার ফলে ইরানের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জবাবে, ইরানও চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে তার পারমাণবিক কর্মসূচি দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে থাকে।
২০১৫ সালের চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত রাখবে এবং এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।
ওই কূটনীতিক আরও জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘পারমাণবিক আলোচনা কমিটি’র মূল্যায়ন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি পুরোপুরি একপাক্ষিক এবং এতে ইরানের স্বার্থরক্ষা হয় না।
তেহরানের মতে, এই প্রস্তাব একতরফাভাবে ইরানের ওপর একটি ‘খারাপ চুক্তি’ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এবং তাই এটি একেবারেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।
তবে, গত সপ্তাহে দুইজন ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের জব্দকৃত অর্থ ছেড়ে দেয় এবং শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার স্বীকার করে, তাহলে তেহরান সাময়িকভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ রাখতে পারে। এর ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত একটি পারমাণবিক চুক্তিতে রূপ নিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :