এক সময় গাজার শিশুরা ঈদের আগের রাত জেগে কাটাত খুশির উত্তেজনায়। নতুন জামা, মিষ্টির বাটি, কোরবানির পশুর গল্প আর সকাল বেলার নামাজের প্রস্তুতিতে মেতে থাকত পুরো পরিবার। এখন সেই রাতেও তারা ঘুমাতে পারে না। তবে আনন্দে নয় ভয়ে। আকাশে গর্জে ওঠা যুদ্ধবিমান, ক্ষুধার কষ্ট আর পরদিন বেঁচে থাকব কি না এই দুশ্চিন্তায় কাঁপে তাদের ছোট ছোট বুক।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শুক্রবার (৬ জুন) উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম বিশ্বে এটি ত্যাগের মহোৎসব হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় আজ তা শুধু বেদনার নাম। যেখানে অন্যান্যরা আনন্দের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, সেখানে গাজার পরিবারগুলো ঈদের দিনটিকেও দেখছে শোক, ক্ষুধা ও আশ্রয়হীনতার আরেকটি দীর্ঘ যাত্রা হিসেবে।
দ্য নিউ আরবকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হুসাম আবু আমের নামের এক গাজাবাসী বলেন,‘ঈদে আমার সন্তানদের আগে জামা-কাপড় আর খেলনা কিনে দিতাম। ঈদ ছিল তাদের জন্য বছরের সবচেয়ে আনন্দের সময়। কিন্তু এবার ওদের একটাই চাওয়া এক টুকরো রুটি। মিষ্টি নয়, খেলনা নয় শুধু একটু খাবার।’
গাজার জেইতুনে বাস করতেন হুসাম। দখলদারদের বিমান হামলায় তার বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ। পরিবারের অনেক সদস্যকে হারিয়ে এখন তিনি আশ্রয় নিয়েছেন খান ইউনিসের একটি স্কুলে, যেখানে জাতিসংঘের ত্রাণের উপর নির্ভর করে চলছে তার দিনযাপন।
হুসাম বলেন, ‘গত বছর আমি আমার সন্তানদের বলেছিলাম, ঈদের আগেই যুদ্ধ শেষ হবে। আমরা আবার নিজেদের ঘরে ফিরব। আমি না জেনে ওদের মিথ্যা আশা দিয়েছিলাম। এবার আমি ওদের আর কিছু বলি না। শুধু চুপ করে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম সেই মানুষ, যে পরিবারকে রক্ষা করত, খাবার এনে দিত। এখন আমি শুধু গল্প বলি, যেন বাচ্চারা বোমার শব্দ না শুনে ঘুমাতে পারে, যেন তারা ক্ষুধা ভুলে কিছুক্ষণ হাসতে পারে। কণ্ঠ ভেজা স্বরে বলেন হুসাম।’
৩৭ বছর বয়সী এই বাবা আরও বলেন, ‘আমি বহু আপনজনকে হারিয়েছি। আমার এখন কান্নার শক্তিও নেই। ঈদ এখন আর কোনো উৎসব নয়, ঈদ মানে আমাদের যা ছিল, তা হারানোর বেদনাময় স্মৃতি।’