ইরান এবং ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা এখনো অব্যাহত। ইসরায়েলের লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা। তবে ইরানের দুটি পারমাণবিক স্থাপনা মাটির অনেক গভীরে যা বিমান হামলা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এমনকি এতটাই গভীরে যে, মার্কিন বাংকার বাস্টার ব্যবহার করেও ধ্বংস করা সম্ভব না ইসরায়েলের।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা মতে, পারমাণবিক কেন্দ্রটি মাটি থেকে ৪০ বা ৫০ মিটারেরও বেশি গভীরে নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ কেন্দ্রটি আড়াই মিটার পুরু কনক্রিট বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা।
পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিরোধবিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ইন্টানরন্যাশনাল সায়েন্সের মতে, নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রের গভীরতা ৮০ মিটারের মতো।
নাতানজ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে দুটি পারমাণবিক ইউনিট ও তিনটি বড় বড় ভবন রয়েছে যেখানে প্রায় ৫০ হাজার সেন্ট্রিফিউজ ধারণ করা যায়। সেন্ট্রিফিউজ হলো এমন একটি যন্ত্র যেখানে ঘূর্ণায়ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে।
অপরদিকে ইরানের সরকারি সংস্থার মতে, ইরানের আরেকটি পারমাণবিক কেন্দ্র হলো ফরদো। যার অবস্থান তেহরান থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম শহরের কাছে। এই প্লান্টটি মাটি থেকে ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে বানানো হয়েছে।
পুরো প্লান্টটি পাহাড়ের শক্ত পাথরের নিচে চাপা এবং মজবুত কনক্রিটের প্রাচীরের নিচে মোড়ানো। এর চার পাশে রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফরদো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের রয়েছে অন্তত ৩০০০ সেন্ট্রিফিউজ রাখার ব্যবস্থা ও উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি। যা দিয়ে ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব।
ইসরায়েলি হামলায় নাতানজ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে।
প্রকল্পগুলো এত গভীরে বানানোর উদ্দেশ্য একটাই। শত্রু দেশের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। ইসরায়েলের অন্যতম টার্গেট হলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা। এরই মধ্যে তারা ভূগর্ভস্থ নকশাও পেয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি কমিশনের (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গোসী জানিয়েছে, ইসরায়েলের পক্ষে শুধু বিমান হামলার মাধ্যমে মাটির গভীরে হামলা করে কেন্দ্র ধ্বংস করা অসম্ভব।
যদিও বিবিসি সংবাদমাধ্যমকে জো ইনউড জানিয়েছেন, শুধু জিবিইউ ৭৫০ ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স পেনেট্রেটর মাধ্যমে মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মিটার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম। একে বাংকার ব্লাস্টারও বলা হয়। প্রায় ১৪ হাজার কেজি ওজনের এ বোমা ফেলা হয় বি২ স্টেলথ বোম্বার বিমান থেকে।
তবে উভয় শক্তিশালী প্রযুক্তির একটিও ইসরায়েলের নেই। প্রযুক্তিগুলো আছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সরাসরি এ সংঘাতে জড়ায়নি। ইসরায়েল এক তরফাভাবে অভিযান চালাচ্ছে। তবে যুদ্ধে অংশ না নিলেও ইসরায়েলকে তাদের উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের কাছে থাকা সব থেকে শক্তিশালী দুটি বোমা হলো দ্য রক্স ও এয়ার লরা। এগুলো কেবল মাটির ৬ থেকে ১০ মিটার গভীরে আঘাত হানতে পারে। যদি ইরানের কোনো স্থাপনা মাটি থেকে ১০ মিটার গভীরে হয় তাহলে ইসরায়েল তাদের সীমিত অস্ত্র দিয়েও ইরানে আঘাত করতে পারবে।
ইসরায়েল যেভাবে আক্রমণ করছে তাতে শুধু মাটির ওপরের বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন অথবা কুলিং স্টেশনে আঘাত করা সম্ভব। এ ধরনের হামলায় প্রকল্পগুলোর সাময়িক কার্যক্রম ব্যাহত হলেও স্থায়ী ক্ষতির কোনো আশংকা নেই।
তবে ইরানকে প্রতিহত করতে ইসরায়েলের যেসব স্থাপনায় আঘাত হানা জরুরি তা ইসরায়েল নিজের সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধ্বংস করতে পারবে না।
এদিকে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে শুধু ইরান-ইসরায়েল নয়, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শুরু হবে দীর্ঘ যুদ্ধ। এমনটা মন্তব্য আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
আপনার মতামত লিখুন :