ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন দেশে রয়েছে মার্কিন ঘাঁটি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৭:২০ এএম
মার্কিন সামরিক বাহিনী। ছবি- সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে হাজার হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। অঞ্চলটি এমন এক জায়গা, যেখানে গত কয়েক দশকে বারবার সামরিক অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন আবার নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে।

সম্প্রতি ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্ত হবেন কি না, তা ভাবছেন তিনি। এর ফলে এই অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কা বাড়ছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর কোন কোন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখেছে। চলুন নিচে দেখে নেই অঞ্চলটিতে মার্কিন ঘাঁটির অবস্থান-

বাহরাইন

ছোট উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি রয়েছে, যার নাম নেভাল সাপোর্ট অ্যাক্টিভিটি বাহরাইন। এখানেই মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহর এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নৌবাহিনীর প্রধান সদর দপ্তর অবস্থিত।

বাহরাইনের গভীর সমুদ্রবন্দর এতটাই বড় যে সেখানে বিমানবাহী জাহাজের মতো বিশাল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ভিড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৮ সাল থেকেই এই ঘাঁটি ব্যবহার করছে। তখন এটি ব্রিটেনের রয়েল নেভির নিয়ন্ত্রণে ছিল।

এই ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি মাইনবিরোধী জাহাজ, দুটি সরবরাহ জাহাজ, এবং ছয়টি দ্রুত প্রতিক্রিয়া কাটারসহ কোস্টগার্ডের জাহাজ মোতায়েন রয়েছে। ফলে বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বেশ শক্তিশালী ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইরাক

ইরাকের বিভিন্ন জায়গায়, যেমন আল-আসাদ ও আরবিল বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা মোতায়েন রয়েছে। যদিও ইরাকি সরকার ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তারা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখছে, যা একটি জটিল সম্পর্কের দৃষ্টান্ত।

ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে গঠিত আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে ইরাকে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাক সরকার একমত হয়েছে, ধাপে ধাপে এই বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার একটি সমন্বিত সময়সূচি অনুসরণ করা হবে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো ইরানপন্থী মিলিশিয়াদের বারবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র পরে এসব হামলার জবাবে তেহরান-ঘনিষ্ঠ লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালায়, যার ফলে সহিংসতা কিছুটা কমে আসে।

এই পরিস্থিতি দেখায়, ইরাকে মার্কিন উপস্থিতি এখনো অতি সংবেদনশীল ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কুয়েত

কুয়েতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্যাম্প আরিফজান, যা মার্কিন সেনাবাহিনীর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কমান্ড সেন্টকম-এর অগ্রবর্তী সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সরবরাহ মজুদ রাখা হয়।

এছাড়াও, আলী আল-সালেম বিমান ঘাঁটি কুয়েতে একটি প্রধান বিমান ঘাঁটি হিসেবে কাজ করছে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮৬তম বিমান অভিযান ইউনিট মোতায়েন আছে, যা যুদ্ধবিমানের পরিবহন, জ্বালানি সরবরাহ এবং অন্যান্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এই ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন-সহ বিভিন্ন উন্নত ড্রোনও রয়েছে, যেগুলো গোয়েন্দা নজরদারি ও আক্রমণ অভিযানে ব্যবহৃত হয়।

সব মিলিয়ে, কুয়েত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

কাতার

কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর একটি। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্টকম-এর অগ্রবর্তী কমান্ড, বিমান বাহিনী ও বিশেষ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

জর্ডানের রুকবান রওয়াইশদ জেলার টাওয়ার ২২ নামে পরিচিত মার্কিন সামরিক ফাঁড়ির স্যাটেলাইট দৃশ্য। ছবি- সংগৃহীত

এই ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান নিয়মিত ঘুরে ফিরে আসে অর্থাৎ এখানে যুদ্ধবিমান মোতায়েন ও পরিচালনার একটি চক্র চলছে। এছাড়াও, এখানে রয়েছে ৩৭৯তম বিমান অভিযান ইউনিট, যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত, যেমন- বিমান পরিবহন, বিমান জ্বালানি সরবরাহ (মিড-এয়ার রিফুয়েলিং), নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম ও আহত সেনাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর।

সব মিলিয়ে, আল উদেইদ ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে একটি কৌশলগত ও কার্যকর অপারেশন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।

সিরিয়া

ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীদের দমনের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছর ধরে সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। আইএস একসময় সিরিয়া ও প্রতিবেশী ইরাকের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছিল। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সেনা পাঠায়।

তবে ২০২৪ সালের এপ্রিলে পেন্টাগন জানিয়েছে, তারা ধীরে ধীরে সিরিয়ায় সেনা সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনবে। অর্থাৎ এক হাজার জনের নিচে নামিয়ে আনা হবে। এই সিদ্ধান্তকে তারা সেনা পুনর্বিন্যাস বা একত্রিকরণের অংশ হিসেবে দেখছে।

এতে বোঝা যাচ্ছে, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক উপস্থিতি কমলেও, তারা এখনো অঞ্চলটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল দাফরা বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮০তম বিমান অভিযান ইউনিট মোতায়েন রয়েছে। এই ইউনিটে ১০টি স্কোয়াড্রনের যুদ্ধবিমান ও ড্রোন রয়েছে, যার মধ্যে এমকিউ-৯ রিপার নামের অত্যাধুনিক ড্রোনও আছে।

এই ঘাঁটি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান নিয়মিত ঘোরাফেরা করে, আর এখানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণের জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্রও রয়েছে, যাকে উপসাগরীয় বিমান যুদ্ধ কেন্দ্র বলা হয়।

এছাড়াও জর্ডান, সৌদি আরবেও রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি।