ঢাকা শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

আবারও জাতিসংঘের কালো তালিকায় ইসরায়েল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি- সংগৃহীত

শিশুদের ওপর গুরুতর সহিংসতার অভিযোগে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরায়েলকে জাতিসংঘের ‘কালো তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) প্রকাশিত জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’-এ এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এ তালিকায় সেসব দেশ বা সশস্ত্র গোষ্ঠীকে রাখা হয়, যারা সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের ওপর গুরুতর নির্যাতন চালায়। এমন এক সময়ে এ সিদ্ধান্ত এলো যখন প্রায় ২০ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা চলছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের ওপর সহিংসতা নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে।

এর মধ্যে গাজা উপত্যকা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরেই শিশুদের অধিকাংশ অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার জন্য মূলত ইসরায়েলি বাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে।

‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিশ্বব্যাপী শিশুদের ওপর গুরুতর সহিংসতা ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ওপর ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা যাচাই করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, অঙ্গহানি, যৌন সহিংসতা এবং স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলা।

শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে ২ হাজার ৯৫৯ শিশুর ওপর ৮ হাজার ৫৫৪টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২ হাজার ৯৪৪ জন ফিলিস্তিনি শিশু এবং ১৫ জন ইসরায়েলি শিশু।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ১ হাজার ২৫৯ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে এবং আরও ৯৪১ জন আহত হয়েছে।

এই সহিংসতা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর। ওই ঘটনার পর থেকে গাজায় লাগাতার নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জাতিসংঘের প্রকাশিত সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া আরও ৪ হাজার ৪৭০ শিশুর নিহত হওয়ার তথ্য যাচাই করছে জাতিসংঘ।

অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমেও সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনক। সেখানে গত বছর ৯৭ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৩ হাজার ৬৮৮টি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানেও গত বছরে পাঁচ শতাধিক শিশু নিহত বা আহত হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং ইসরায়েলে শিশুদের ওপর এই মাত্রার গুরুতর সহিংসতায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত।’

তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান। বিশেষ করে জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করার এবং স্কুল ও হাসপাতালের নিরাপত্তা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে এখনো ইসরায়েলের জাতিসংঘ মিশনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।

এদিকে, হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস এবং ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডসকেও দ্বিতীয়বারের মতো এই কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২০২৪ সালে গাজা ছাড়াও যেসব দেশে শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো হচ্ছে, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (প্রায় ৪ হাজার), সোমালিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০), নাইজেরিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০) এবং হাইতি (প্রায় ২ হাজার ২০০)।

শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা বেড়েছে, লেবাননে (৫৪৫ শতাংশ), মোজাম্বিকে (৫২৫ শতাংশ), হাইতিতে (৪৯০ শতাংশ), ইথিওপিয়ায় (২৩৫ শতাংশ) এবং ইউক্রেনে (১০৫ শতাংশ)।